হিজড়া'রা হচ্ছে যৌন প্রতিবন্ধী। হিজড়া সম্প্রদায় সৃষ্টির সেরা জীব বা আশরাফুল মাখলুকাতের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ মানুষের পর্যায়ভুক্ত, তারাও সৃষ্টির সেরা। তাদের অবজ্ঞা করা মানে আল্লাহর সৃষ্টিকেই অবজ্ঞা করা।
‘হিজড়া’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ উভয় লিঙ্গ (Common Gender), ইংরেজীতে একে ট্রান্সজেন্ডার (Transgender) বলা হয়।
জীববিজ্ঞানের গবেষকদের মতে, লিঙ্গ ও আচরনগতভাবে হিজড়াদের প্রায় ৬টি ধরন চিহ্নিত করা যায়। এদের চালচলন, দেহের গঠন,
কথাবার্তায়, নারী ও পুরুষের সমন্বয় ঘটে। তবে লিঙ্গের আকারের ভিত্তিতে আবার এদের ২ভাগে ভাগ করা হয়।
আশার কথা হচ্ছে যে, সঠিক অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়াদের লিঙ্গ সমস্যার সমাধান সম্ভব। মুসলিম রাষ্ট্র ইরানে সরকারি উদ্যোগে, অপারেশনের মাধ্যমে হিজড়াদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
এছাড়াও জন্মের পর বাড়ন্ত সময়ে শিশুর যখন অস্বাভাবিকতা বা হিজড়ার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়; তাহলে তৎক্ষণাৎ পরিণত বয়সে যাওয়ার আগে যদি সঠিক মেডিকেল ট্রিটমেন্ট করা হয় তাহলে বেশীভাগ ক্ষেত্রেই তাকে সুস্থ করা সম্ভব।
বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও সরকাররা যদি হিজড়াদের স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে জীবন যাপনে এগিয়ে আসতো, তাহলে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে সমাজ বহির্ভূত বসবাস করতে হতো না।
অনেক সময় আবার হিজড়াদের বাড়াবাড়ির ফলও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। রাস্তা ঘাট ও ঘর বাড়িতে অস্বাভাবিক ও কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি। চুরি, ছিনতাই, দেহব্যবসা ও বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়া। আর আজকালতো তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য ও দিনকে দিন স্বাভাবিক মানুষ থেকে যৌনাঙ্গ অপারেশনের মাধ্যমে কৃত্রিম হিজড়ায় রুপান্তর বৃদ্ধি পাওয়া; নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে।
হিজড়াদের যদি যৌন ক্ষমতা থাকতো তবে হিজড়া থেকে হিজড়াই জন্ম হতো। কিন্তু আল্লাহ্ পাক নারী পুরুষ ব্যাতীত তৃতীয় লিঙ্গের কোনো স্থান দেননি। মানুষ হিসেবে ওদের যৌন কামনা বাসনা থাকলেও, কামনা বাসনার ক্ষেত্রটি নেই।
বোবা, অন্ধদের মতো হিজড়ারাও একধরনের প্রতিবন্ধী হলেও অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের চেয়ে এরা একেবারে সক্ষম। সুদৃষ্টি ও সঠিক অধিকার পেলে অন্যান্য সাধারন মানুষের মতো এরাও সমাজবদ্ধভাবে জীবন যাপন করতে পারবে।
হিজড়াদের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যের কারণে, সমাজে তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।
যদিও হিজড়া সম্প্রদায় বাংলাদেশে এখন তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যার মাধ্যমে হিজড়াদের আরও কোনঠাসা করে রাখার পাশাপাশি তাদেরকে মৌলিক অধিকার থেকেও দূরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর ফলে হিজড়াদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনার বদলে, সমাজের বাইরে থাকার বন্দোবস্ত আরও পাকাপোক্ত করা হয়েছে।
আমাদের দেশের জনসাধারণ ও হিজড়ারা যদি ধর্মীয় মূল্যবোধ মেনে চলতো, সত্যিকার মুসলিম হয়ে জীবন যাপন করতো; তবে হিজড়াদের আজ এতো দূর্দশা হতো না। কোন মুসলিম কোন হিজড়াকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতো না। এমনকি ধর্মীয় আকিদার গুনে কোন হিজড়াকে সমাজ থেকে দূরে গিয়ে পেট ও মানসিক বিকারগ্রস্থ্যতার মধ্য দিয়ে নানান অপরাধ মূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে হতো না।
হিজড়া সন্তান জন্ম হওয়ার কারণঃ
প্রতিটি মানুষের দেহকোষে মোট ২৩ জোড়া ক্রোমোজম থাকে। তার মধ্যে ২২ জোড়া অটোজম এবং এক জোড়া সেক্স (SEX) ক্রমোজম থাকে। নারীর ডিম্বানুতে XX ক্রমোজম এবং পুরুষের শুক্রানুতে XY ক্রমোজম থাকে। সুতরাং নারীর ডিম্বানুর X ক্রমোজমকে যদি পুরুষের শুক্রানুর X ক্রমোজম নিষিক্ত করে, তবে জাইগোটের ক্রমোজম হবে XX এবং কন্যা সন্তানের জন্ম হবে ৷
একইভাবে, নারীর ডিম্বানুর X ক্রমোজমকে যদি পুরুষের শুক্রানোর Y ক্রমোজম নিষিক্ত করে, তবে জাইগোটের ক্রমোজম হবে XY এবং পুত্র সন্তানের জন্ম হবে ৷
অর্থাৎ পুরুষের দেহকোষে X Y ক্রোমোজম এবং মেয়েদের দেহকোষে থাকে X X ক্রোমোজম। পুরুষের X ও মেয়েদের X মিলে হয় কন্যা সন্তান, আর পুরুষের Y ও মেয়েদের X মিলে হয় পুত্র সন্তান।
হিজড়া সন্তান জন্ম হওয়ার কারন হিসেবে আধুনিক জেনেটিক্স বা চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে হিজড়া হলো সেক্র ক্রোমোজমের ত্রুটিপূর্ণ বিন্যাস (Chromosomal Aberration) বা জিন জনিত জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধি ব্যাক্তি যাদের জন্ম পরবর্তী সঠিক লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়।
ভ্রুনের পূর্ণতার স্তরগুলোতে ক্রোমোজম গঠনের প্রভাবে ছেলে শিশুর মধ্যে 'অন্ডকোষ' আর কন্যা শিশুর মধ্য 'ডিম্বকোষ' জন্ম নেয়। অন্ডকোষ থেকে নিসৃত হয় পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেন এবং ডিম্বকোষ থেকে নিসৃত হয় এস্ট্রোজেন। এক্ষেত্রে ভ্রুনের বিকাশকালে নিষিক্তকরণ ও বিভাজনের ফলে বেশকিছু অস্বাভাবিক গঠনের সৃষ্টি হয়। যেমন, XXY অথবা XYY। এর ফলে বিভিন্ন গঠনের হিজড়া শিশুর জন্ম হয়।
ইসলামে হিজড়াদের অবস্থানঃ
ইসলাম সাধারণ মানুষের মতো হিজড়াদেরও লিঙ্গ পার্থক্যে নারী ও পুরুষের কাতারে নিয়ে এসেছে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মাদ (সঃ) এঁর কাছে অনেক হিজড়া পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। নারী হিজড়ারা পুরুষ হিজড়া থেকে পর্দার সহিত জীবন যাপন করেছিলেন।
"হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) বলেছেন, হিজড়ারা জ্বীনদের সন্তান।"
কোন এক ব্যক্তি উনাকে প্রশ্ন করেছিলেন এটা (হিজড়া) কেমন করে হতে পারে। জবাবে তিনি বলেছিলেন, মহান আল্লাহ্ পাক ও রাসুল (সঃ) নিষেধ করেছেন যে, "মানুষ যেন তার
স্ত্রীর মাসিক স্রাব চলাকালে সঙ্গম না করে।"
মাসিকের সময় কোন মহিলার সাথে যৌন মিলন বা সঙ্গম করা হলে, শয়তান তার আগে থাকে ও সেই শয়তান দ্বারা ঐ মহিলা গর্ভবতী হয় এবং হিজড়া সন্তান প্রসব করে।
মানুষ ও জীন এর যৌথ মিলনজাত সন্তানকে ইসলামে বলা হয় খন্নাস।
- ইবনে আবি হাতিম, হাকিম তিরমীজী।
তাই স্বামী স্ত্রীর যৌন মিলনেও ইসলামি রীতিনীতি মেনে চলা উচিত।
যদি কোন হিজরা নারী পুরুষাঙ্গের অধিকারী হয় আর সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হয় তবে এদের নারী ধরা হয়। এরা বিরল হলেও হযরত আলী রাঃ এর জামানায় এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। ইসলামে কেবলমাত্র নারী ও পুরুষেরই বিধিবিধান লিপিবদ্ধ রয়েছে। কারণ ইসলামে নারী ও পুরুষ, এই দুই লিঙ্গ ব্যতীত তৃতীয় লিঙ্গ বলে কিছুই নেই।
এ বিষয়ে "হযরত আলী (রঃ) একদিন রাসূল (সঃ) -কে জিজ্ঞেস করলেন যে, প্রসূত বাচ্চা পুরুষ নাকি নারী তা জানা যায় না, তার বিধান কি?
রাসূল (সঃ) জবাবে বললেন, "সে মিরাস পাবে যেভাবে প্রস্রাব করে।" [সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১২৯৪, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩০৪০৩, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৯২০৪]
উপরের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, গোপনাঙ্গের ধরণের ভিত্তিতে হিজড়াদের নারী অথবা পুরুষের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং সেই অনুযায়ীই তাকে পর্দা, নামায, রোযা পালন করতে হবে।
© dearbangla24
@ হিজড়া, হিজরা বাচ্চা জন্ম হয় কেন? হিজরা সন্তান, হিজরা শিশু
No comments:
Post a Comment