ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার সমষ্টি। এই জীবন ব্যবস্থা পরিচালিত হয় কুরআন ও হাদীসের বিধি বিধান দ্বারা। অন্যান্য সব বিষয়ের মতো ছেলে মেয়েদের বিবাহেরও কিছু নিয়ম কানুন আছে। কিভাবে বিয়ে করতে হয়, কাদের সাথে বিয়ে বৈধ, কি করা যাবে আর কি করা যাবে না এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধি বিধান মেনেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়।
ইসলাম চায় বৈবাহিক সম্পর্ক সুদৃঢ় ও স্থায়ী হোক। বিবাহ পরবর্তী
জীবনে যেনো কোন প্রকার মনোমালিন্য বা বিচ্ছেদের সৃষ্টি না হয়; তাই ইসলাম এদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে— ছেলে মেয়ে পরস্পরের আকীদা-বিশ্বাস, সমাজ-সংস্কৃতি ও রীতিনীতিতে এক ও অভিন্ন হবে। তাই মুসলিম নরনারীর সাথে অমুসলিম নরনারীর বিয়ে জায়েয নেই, এটি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। অবশ্য বিয়ের আগে যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে, আল্লাহ ও রাসূল (সঃ) এঁর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে; তবে তাকে বিয়ে করা যায়েজ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেন,
ﻻ ﺗﻨﻜﺤﻮﺍ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﺎﺕ ﺣﺘﻲ ﻳﺆﻣﻦ
অর্থাৎ "তোমরা মুশরিক মহিলাদের বিয়ে করো না মুমিন না হওয়া পর্যন্ত।"
এ আয়াতের মর্মার্থ হচ্ছে, মুশরিকদের সাথে বিয়েশাদি নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, তাদের সাথে কথাবার্তা, চলাফেরা, উঠাবসা, মুহাব্বত-ভালোবাসায় শিরকের প্রতি ঘৃণা কমে যাবে। অজান্তে শিরকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ। এছাড়াও অন্যান্য সমস্যাতো আছেই। তাই মুশরিক তথা অমুসলিমদের সাথে বিয়ের সম্পর্ক গড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
অমুসলিমদের বিয়ে করা না করার গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিজ্ঞাসা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
*** মুরতাদকে বিয়ে করা যাবে কি না ?
* মুরতাদকে কোন অবস্থাতেই বিয়ে করা যাবে না। তাকে বিয়ে করতে হলে কালিমা পড়িয়ে মুসলমান বানাতে হবে; তারপর তাকে বিয়ে করা যাবে।
*** খ্রিষ্টান ছেলে বা মেয়ের সাথে মুসলমানদের বিয়ে সহীহ হবে কি না?
* ইসলামী শরীয়তে আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদী ও নাসারা (খ্রিষ্টান) মহিলাকে মুসলমান পুরুষের জন্য বিয়ে করা যায়েয আছে। কিন্তু যে কোন ইয়াহুদী খ্রিষ্টান মহিলা আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং কেবলমাত্র ঐ সব ইয়াহুদী-খ্রিষ্টান মহিলাকে বিয়ে করা যায়েয আছে; যারা বাস্তবিকপক্ষে মূসা (আঃ) বা ঈসা (আঃ) কে নবী বলে মনে প্রাণে স্বীকার করে। তাদের দ্বীনকে সহীহ মনে করে এবং তা মানতে ও তার উপর চলতে সব সময় চেষ্টা করে। তবে এ ধরনের আহলে কিতাব মহিলা বর্তমানে পাওয়া দুস্কর । বর্তমান যুগে বহু ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান মহিলা আছে, যারা আদমশুমারীতে ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা মূসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ) কে নবী বলে মানে না এবং তাদের শরীয়তও মানে না। তারা তাদের ধর্মের কোন তোয়াক্কাও করে না। শুধু নাম মাত্র ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান। সুতরাং, যে কোন আহলে কিতাব মহিলাকে কিতাবী মহিলা মনে করে বিয়ে করা নিজের দ্বীন ঈমান ধ্বংসের শামিল। সুতরাং, কোন মুসলমানের জন্য সে ধরনের মহিলাকে বিয়ে করা বৈধ নয়। তাই এদের বিয়ে করার পূর্বে অবশ্যই মুসলমান বানাতে হবে।
*** হিন্দু মেয়ে ইসলাম গ্রহণের পর তার সাথে মুসলমান ছেলের বিবাহ সহীহ কি না?
* অমুসলিম ছেলে বা মেয়ে মুসলমান হলে তাদের সাথে মুসলমানদের বিবাহ সহীহ হবে। অর্থাৎ হিন্দু মেয়ে যদি মুসলমানিত্ব গ্রহন করে, তবে তার সাথে বিবাহ সহীহ।
*** মুসলিম মেয়ে বা ছেলের জন্য অমুসলিম ছেলে বা মেয়েকে বিবাহ করা যাবে কি না?
* যদি কোন অমুসলিম কালিমায় বিশ্বাস স্থাপন করে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে, তবে তাকে বিবাহ করা যাবে। এছাড়া মুসলিম মেয়ে বা ছেলের জন্য অমুসলিম মেয়ে বা ছেলেকে বিবাহ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম কাজ। তা অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
*** কাদিয়ানীদের সাথে বিয়ে-শাদী সহীহ হবে কি না?
* গোটা পৃথিবীর আলিম, মুফতী, ইসলামী বুদ্ধিজীবি ও মুসলিম দেশের ইসলামী আদালতের রায়ে কাদিয়ানীরা অমুসলিম। কাদিয়ানী সম্প্রদায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) কর্তৃক “খাতামুন্নাবিয়্যিন” শব্দের ব্যাখ্যা অস্বীকার করার দরুন এবং তাদের স্বতন্ত্র আক্বীদা ও বিশ্বাসের কারণে কাফির।
তাই, কোন মুসলমানের সাথে কাফিরদের বিয়ে-শাদী যেমন কখনও জায়িয নয়, তেমনিভাবে কাদিয়ানীদের সাথেও বিয়ে জায়েয নয়- এটি সম্পূর্ণ হারাম। যদি না জেনে কেউ তাদের সাথে বিয়ে-শাদী করে থাকে, বা বিয়ে দিয়ে থাকে, তাহলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে এবং তাওবা করে নিতে হবে। অবশ্য পুনরায় কালিমা পড়ে ইসলামে পরিপূর্ণ বিশ্বাস আনলে তাকে বিয়ে করা সম্ভব। নতুবা তাদের ঈমান থাকবে না।
@ ইসলামে হিন্দু মেয়ে বিয়ে করার বিধান কি? খ্রিষ্টান মেয়ের সাথে মুসলমানদের বিয়ে সহীহ হবে কি না? হিন্দু ছেলের সাথে মুসলমান মেয়ের বিয়ে! শরীয়াতে অমুসলিম বিয়ে। হিন্দুদের সাথে বিবাহ-শাদী সহীহ হবে কি না? ইসলামে বিয়ে, হিন্দু ছেলে, কুরআন হাদীসে অমুসলিম বিয়ে.. হিন্দু মেয়ে.. বিবাহ, ইসলামে অমুসলিম বিয়ের বিধান
No comments:
Post a Comment