অক্টোবর মাস হলো স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এই মাসটি পালিত হয় নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচির ভেতর দিয়ে।
স্তন ক্যানসার বিশ্বব্যাপী নারীদের জন্য এক ভয়াবহ মৃত্যুফাঁদ। সারা পৃথিবীতে নারীদের যেসব ক্যানসার হয়, তার মধ্যে স্তন ক্যানসার এক নম্বর। ক্যানসারজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে এই স্তন ক্যানসার। নারী-পুরুষ উভয়ের বিবেচনায় এর অবস্থান দ্বিতীয়। এক নম্বরে রয়েছে ফুসফুসের ক্যানসার।
একসময় ভাবা হতো, শুধু নারীরাই বুঝি এই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এখন দেখা যাচ্ছে শুধু নারী নয়, পুরুষও আক্রান্ত হতে পারে এই স্তন ক্যানসারে। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে এই রোগের হার অনেক কম।
হু-এর এক সমীক্ষা মতে, প্রতিবছর ১৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে এবং চার লাখ ৫৮ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।
অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটছে মূলত নিম্নআয়ের দেশগুলোতে। কারণ, সেসব দেশে সচেতনতার ক্ষেত্রে রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। এতে প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়ে না। আর পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাব তো রয়েছেই।
শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার আফ্রিকান বা এশীয়দের তুলনায় বেশি। সারা বিশ্বের হিসাবে নারীদের মধ্যে এর অবস্থান এক নম্বরে হলেও বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয়। প্রথম হলো জরায়ুমুখের ক্যানসার।
স্তন ক্যানসারের কারণ
আর সব ক্যানসারের মতো নিয়ন্ত্রণহীন অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফল হলো স্তন ক্যানসার। ঠিক কী কারণে স্তন কোষে এই অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন হয়, তা জানা যায়নি। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ত্রুটিযুক্ত জিন এই ক্যানসারে ভূমিকা রাখে। তবে এর বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণের কথা জানা যায়।
যেমন :
—একই পরিবারের দুই বা ততোধিক নিকটাত্মীয়ের স্তনের ক্যানসার।
—একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অন্যান্য ক্যানসার, বিশেষ করে মলাশয় ও ভ্রূণকোষের ক্যানসার, সেইসঙ্গে স্তন ক্যানসার।
—বন্ধ্যত্ব বা বেশি বয়সে সন্তান হওয়া।
—খুব অল্প বয়সেই ঋতুস্রাব হওয়া কিংবা বেশি বয়সে মেনোপজ হওয়া।
—গর্ভনিরোধক পিল খাওয়া।
—হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT)।
—শিশুকে বুকের দুধ পান না করানো।
—অ্যালকোহল।
—ধূমপান।
—স্থূলতা।
—অধিক চর্বিজাতীয় খাবার ও শারীরিক কর্মহীনতা।
তবে মনে রাখতে হবে, স্তন ক্যানসার সংক্রামক রোগ নয় এবং একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে এই রোগ ছড়ায় না।
লক্ষণ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় স্তনে এক ধরনের চাকা। এটি মূলত বেদনাহীন। এ ছাড়া আরো যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে সেগুলো হলো :
—স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন।
—স্তনের ত্বকে কুঁচকে যাওয়া।
—স্তনের বোঁটা ভেতর দিকে ঢুকে যাওয়া।
—স্তনের বোঁটা থেকে রক্তসহ তরল পদার্থের ক্ষরণ।
—স্তনের বোঁটায় বা তার চারপাশে চুলকানির মতো হওয়া।
—বগলের লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে যাওয়া।
ডা. গুলজার হোসের উজ্জ্বল
রেসিডেন্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ।
No comments:
Post a Comment