সুস্থ শরীরের জন্য রাতে ভালো ঘুমের বিকল্প নেই। ঠিকমতো ঘুম না হলে সারা দিনের কাজকর্মে ভুগতে হয়। শুধু তা-ই নয়, অনিয়ন্ত্রিত ঘুম আপনার স্পার্মের (বীর্য) ওপরও নেতিবাচক প্রভাব রাখে।
নিউইয়র্কভিত্তিক পুরুষদের মাসিক সাময়িকী ‘জিকিউ’তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গবেষকেরা জানান, এক বছর ধরে তাঁরা মোট ৭০০ দম্পতির দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর চোখ রেখেছেন। গবেষকেরা দেখেছেন, এসব দম্পতির মধ্যে যেসব পুরুষ রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের প্রজননক্ষমতা দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো পুরুষদের তুলনায় ৩১ শতাংশ কমে যায়।
রাতে যাঁরা বেশি সময় ঘুমান, তাঁরা এ সমীক্ষা দেখে খুশি হলে ভুল করবেন। কেননা গবেষকেরা আরও জানিয়েছেন, রাতে যাঁরা ৯ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি সময় ঘুমান, তাঁদের প্রজননক্ষমতা দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোনো পুরুষদের তুলনায় ৪৯ শতাংশ কমে যায়।
বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি-সংক্রান্ত বিদ্যার অধ্যাপক লরেন ওয়াইজের ব্যাখ্যা, এ সমীক্ষায় পুরুষের প্রজননক্ষমতার সূচক হলো নারীর গর্ভধারণ। অনিয়ন্ত্রিত ঘুম পুরুষের স্পার্মে গুণগত কী কী পরিবর্তন আনছে, তা বিবেচনায় আনেননি গবেষকেরা।
তবে ঠিক কী পরিমাণ বেশি কিংবা কম ঘুম স্পার্মের ক্ষতি করছে, তা এখনো বের করতে পারেননি গবেষকেরা। কিন্তু তাঁরা নিশ্চিত, খুব কম সময় ঘুমালে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি দেখা দেয়। এই হরমোন স্পার্ম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গবেষকদের মতে, রাতে অনিদ্রায় ভোগা ব্যক্তির স্পার্মের প্রজননক্ষমতা ভালো ঘুম হওয়া ব্যক্তির তুলনায় ২৮ শতাংশ কমে যায়।
যদিও অনিদ্রায় ভোগা ব্যক্তির স্পার্মের প্রজননক্ষমতা কমার নেপথ্যে আরও কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছেন গবেষকেরা। ধূমপান, অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি কিংবা ওজন বেশি হয়ে গেলে অনিদ্রায় ভোগা স্বাভাবিক, আর এসব কারণেই মূলত স্পার্মের প্রজননক্ষমতা কমে যায় বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
দাম্পত্য জীবনে অনিদ্রার কারণে তাই পুরুষের প্রজনন পরিকল্পনায় বেশ সমস্যা হয়। এখান থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়, সে পরামর্শও দিয়েছেন লরেন ওয়াইজ। তাঁর ভাষ্য, বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা শুরুর অন্তত তিন মাস আগে থেকে ঘুমের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। কারণ, প্রায় ৭২ দিনের মধ্যে স্পার্ম কোষ পরিপক্ব হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, আড়াই মাস ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়তে পারলেই আপনি বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন!
সংসার বড় করার আগে সহজ সূত্রটি মনে রাখবেন। বেশি ঘুম ভালো নয়, কম ঘুমও ক্ষতিকর। চাই পরিমিত ঘুম।