পক্স বা বসন্ত রো‌গ নিরাম‌য়ের উপায়

বসন্ত ঋতুই নয়, বসন্ত একটা রোগেরও নাম। বস‌ন্তের বাতা‌সে মন উৎফুল্ল থাক‌লেও; বসন্ত রো‌গে মন ব্যাথায় ব্যাকুল হ‌য়ে ও‌ঠে। একসময় এই সংক্রামক রোগ‌টির চি‌কিৎসা ছিল দুষ্কর । আধুনিককালে এসে প্রতিষেধক টিকায় এই রোগের প্রকোপ কমেছে। চি‌কিৎসা বিষয়েও সচেতন হয়েছে মানুষ। তাই বসন্ত রোগ এবং এ রোগে করণীয় সম্পর্কে অাজ‌কের বিস্তা‌রিত অা‌লোচনা অাপনার কা‌জে লাগ‌বেই।

বসন্ত বা পক্স রো‌গের ধরণ :
"‌চি‌কেন পক্স" বা জলবসন্ত এবং "স্মল পক্স" বা গুটিবসন্ত ; বসন্ত রোগের এই দুটি ধরনেরই
প্রাদুর্ভাব ছিল একসময়। ‘চিকেন পক্স’ বা জলবসন্তের প্রকোপ এখনো থাকলেও ‘স্মল পক্স’ বা গুটিবসন্ত এখন আর দেখা যায় না। গু‌টি বসন্ত ছি‌লো মারাত্বক এক‌টি ছোয়া‌চে রোগ, যা কিনা গ্রা‌মে গ্রা‌মে প্রচুর জীবনহা‌নি ঘটা‌তো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ‌ার মতে, আশির দশকেই পৃথিবী থেকে গুটিবসন্ত নির্মূল হয়ে গেছে।

জলবসন্তের লক্ষণ :
শুরুর দিকে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, মাথাব্যথা করা, গা-হাত-পা ব্যথা করা এমনকি পিঠেও ব্যথা হতে পারে। একটু সর্দি-কাশিও হতে পারে। এরপর জ্বর জ্বর ভাব হবে। এগুলো রোগের পূর্ব লক্ষণ।
এরপর শরীরে ঘামাচির মতো কিছু উঠতে দেখা যায়। তারপর সেটা দ্রুতই বড় হতে থাকে এবং ভেতরে পানি জমতে থাকে। খুব দ্রুতই শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। আর এভাবে জলবসন্ত হয়ে গেলে রোগীর অনেক জ্বর আসবে। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে আর সঙ্গে সর্দি-কাশিও থাকবে।
রো‌গটি যেভা‌বে ছড়ায় :
চিকেন পক্স বা জলবসন্ত ভাইরাসজনিত একটি সংক্রামক রোগ। ভ্যারসিলো জস্টার নামের একটি ভাইরাসের কারণে জলবসন্ত হ‌য়ে থাকে। যেকোনো বয়সেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও, শিশু ও অল্পবয়সীরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
‌ ছোয়া‌চে রোগ বিধায় রোগীর সংস্পর্শ এবং বাতা‌সের মাধ্য‌মে রোগ‌টি বে‌শি ছড়ি‌য়ে প‌ড়ে। বসন্ত রোগ‌টি যখন ক‌মে যায় অর্থাৎ সে‌রে ও‌ঠার সময়ই বে‌শি মারাত্বক হ‌য়ে ও‌ঠে। রোগ‌টি সে‌রে ওঠার সময় অাক্রান্ত চামড়া শু‌কে যায়। তখন শুক‌নো চামড়াগু‌লো ঝ‌ড়ে প‌ড়ে। এই শুক‌নো চামড়াই ভ্যার‌সি‌লো জস্টার না‌মের ভাইরাস বহন ক‌রে।
বসন্ত ছোয়া‌চে রোগ হওয়ায় কোনো সুস্থ ব্যক্তি বসন্ত রোগীর সংস্পর্শে এসে এতে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। জলবসন্ত রোগের সংক্রমণটা হয় মূলত রোগীর দূষিত চামড়া থেকে। জলবসন্তের গুটির ভেতরে পানি জমা থাকে। গুটি শুকিয়ে যেতে থাকলে ওপরের চামড়াটা ঝরে পড়ে। এই কালো হয়ে যাওয়া শুক‌নো চামড়ায় জীবাণু থেকে যায়। গুটি শুকিয়ে যেতে থাকলে শরীর অনেক চুলকায়। অনেকে তখন এগুলো চুলকিয়ে টেনে তুলে ফেলে। কিন্তু এটা করা একেবারেই ঠিক না। আর শুকনো চামড়াগুলো পুড়িয়ে ফেলাই ভালো।
এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে রোগীকে অবশ্যই আলাদা রাখতে হবে। তাকে আলাদা ঘরে রাখতে হবে এবং তার বিছানাপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। শরীরের ফুসকুড়ি পুরোপুরি শুকানো এবং ঝরে না যাওয়া পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে তিন সপ্তাহ রোগীকে এভাবে আলাদা রাখাটাই শ্রেয়। তবে, রোগীর ঘর যেন পরিষ্কার ও আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে।
জলবসন্তের প্রতিষেধক বা চি‌কিৎসা :
যদিও চিকেন পক্স বা জলবসন্ত একটা ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ, তার পরও এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এখন বসন্তের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন আছে। শিশুর জন্মের ৪৫ দিন পর থেকে যেকোনো বয়সে এই ভ্যাকসিন নেওয়া যায়। আর যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে, তাদের এ রোগ হওয়ার ঝু‌কি নেই। অযথা রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়ারও প্রয়োজন নেই। প্রাথমিক চি‌কিৎসা ও স‌চেতনতা বা চিকিৎস‌কের পরামর্শ অনুযায়ী চললে এ রোগ সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যে‌তে পারে।
জলবস‌ন্তের দানা বা ফুসকু‌ড়িগু‌লো কোন অবস্থা‌তেই নখ দি‌য়ে চুলকা‌নো যা‌বে না। রোগ সনা‌ক্তের প্রথম থে‌কেই হাত ও পা‌য়ের নখ একেবা‌রেই ছোট ক‌রে ফেল‌তে হ‌বে। সবসময় ঠান্ডা স্থা‌নে থাকার চেষ্টা কর‌তে হ‌বে এবং রোদ প‌রিহার কর‌তে হ‌বে।
জলবসন্ত রোগীর খাবার :
গরুর গোশত, চিং‌ড়ি, ইলিশ ইত্যা‌দি এবং তৈলাক্ত খাবার প‌রিহার কর‌তে হ‌বে। এ সময়ে রোগীকে অনেক পুষ্টিকর খাবার দেওয়া প্রয়োজন হয়। শাকসব‌জি, পাকা ফল বে‌শি ক‌রে খে‌তে হ‌বে। অার প্রচুর প‌রিমা‌নে পা‌নি পান কর‌তে হ‌বে। যতটা সম্ভব তরল খাবার খে‌তে হ‌বে। শরীরের দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে রোগীকে বেশি বেশি করে খেতে হবে।
গোসল করা যা‌বে কিনা :
জলবসন্ত হওয়ার পরও নিয়মিত গোসল করা যায়। তবে গোসল শেষে শরীর ঘষে মোছা যাবে না, আলতো করে মুছে নিতে হবে। স্বাভাবিক পানি দিয়ে গোসল করানো যাবে। আর রোগীর ব্যবহূত পোশাক, বিছানার চাদর, শোবার ঘর অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এ সময়ে ডাবের পানি খুব উপকারী। ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়া এবং গোসল করলেও উপকার পাওয়া যাবে।
বসন্ত রো‌গের দাগ দূর কর‌া :
প্র‌তি‌দিন গাজর খে‌তে হ‌বে। অাক্রান্ত স্থা‌নে দি‌নে ৩\৪ বার মধু লাগা‌লেও উপকার পাওয়া যায়। ডা‌বের পা‌নি দি‌য়ে দি‌নে ২\৩ বার মুখ ধু‌য়ে ফেল‌তে হ‌বে।  অথবা ডা‌বের পা‌নি ডিপ ফ্রি‌জে রে‌খে, বরফ বা‌নি‌য়ে দা‌গের উপর লাগা‌তে হ‌বে। চন্দন বে‌টে মু‌খে লাগা‌লেও বস‌ন্তের দা‌গ মু‌ছে যায়। মু‌খের দাগ দূর করার জন্য মাখন ব্যবহার করা যে‌তে পা‌রে। তারপরও য‌দি কাজ না হয় তাহ‌লে চি‌কিৎস‌কের সরণাপন্ন হ‌তে হ‌বে।

tag in পক্স bd, বসন্ত  রোগ, বসন্ত প্রতি‌ষেধক, ওষুধ, জলবসন্ত চি‌কিৎসা

2 comments:

  1. আমার স্ত্রী চিকেন পক্স এ আক্রান্ত এই অবস্থায় যৌন মিলন বা সহবাস করা যাবে কি,,,,,,???

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভাই আন্সার পাইলে আমারেও জানায়েন

      Delete