রোগ প্রতিরোধ বা স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে অতি প্রাচীনকাল থেকেই কালোজিরা প্রচুর পরিমানে ব্যবহার হচ্ছে এবং এর উপকারীতা বা গুণাবলীও অনেক। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কালোজিরা খুব উপকারী। কালোজিরাকে খাবার না বলে পথ্যই বলা
যেতে পারে।কালোজিরাতে ১৫ টি অ্যামাইনো এসিড আছে। এর অন্যতম উপাদান নাইজেলোন, থাইমোকিনোন ও স্থায়ী তেল। এতে আরও আছে আমিষ, শর্করা ও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিডসহ নানা উপাদান। কালোজিরার মতো এর তেলে ১০০টিরও বেশি স্বাস্থ্যপযোগী উপাদান আছে। এতে প্রায় ২১% আমিষ, ৩৮% শর্করা এবং ৩৫% ভেষজ তেল ও চর্বি বিদ্যমান।
কালোজিরা সম্পর্কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বানী অবিস্মরণীয়ঃ “হযরত আবূ সালামাহ (রাঃ) হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ “তোমরা এই কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে একমাত্র ‘সাম’ ব্যতিত সর্বরোগের শেফা রয়েছে।” - বুখারী ও মুসলিম।
হাদীসে উল্লেখিত ‘সাম’ এর অর্থ মৃত্যু আর 'শেফা' অর্থ আরোগ্য।
পাশাপাশি কালোজিরার তেলে আছে লিনোলিক এসিড, অলিক এসিড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, জিংক,
ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি২, নিয়াসিন ও ভিটামিন-সি।
কালোজিরার মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো- হাইড্রেট ছাড়াও জীবাণু নাশক বিভিন্ন উপাদান সমূহ।
কালোজিরাতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক।
কালোজিরার উপকারিতা বা স্বাস্থ্যগুন:
কালোজিরায় রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোরিয়াল এজেন্ট, অর্থাৎ শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এই উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক
রোগ হয় না।
পক্ষাঘাত (প্যারালাইসীস) ও কম্পন রোগে কালোজিরার তেল মালিশ করলে আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কালোজিরা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
নিয়মিত কালোজিরা সেবনে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।
তিলের তেলের সাথে কালোজিরা বাঁটা বা কালোজিরার তেল মিশিয়ে ফোড়াতে লাগালে, ফোড়ার উপশম হয়।
কালোজিরা ঠান্ডা জাতীয় ব্যাধি-জ্বর, সর্দি, কফ, কাশি ইত্যাদির জন্য অত্যান্ত উপকারী।
অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ও দাঁতের ব্যাথা, মাইগ্রেন, হাঁপানি নিরাময়ে কালোজিরার সহায়তা করে।
এছাড়াও মাথাব্যাথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা, মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালোজিরা উপযোগী।
মাথা ব্যাথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববর্তী স্থানে দৈনিক ৩/৪ বার কালোজিরা তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
কালোজিরা চূর্ণ ও ডালিমের খোসাচূর্ণ মিশ্রন, কালোজিরা তেল ডায়াবেটিসে উপকারী।
চায়ের সাথে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হয়, তেমনি মেদও বিগলিত হয়।
মধুসহ প্রতিদিন সকালে কালোজিরা সেবনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও সকল রোগ মহামারী হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
কালোজিরা চুর্ণ ও অলিভ অয়েল, ৫০ গ্রাম হেলেঞ্চার রস ও ২০০ গ্রাম খাঁটি মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে খাবারের পর এক চামুচ করে খান। এতে গোপন শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
নিয়মিত কালোজিরা খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি এবং স্পার্মের গুণাগুণ বাড়ে।
জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করার জন্য কালোজিরা যথেষ্ট উপকারী বন্ধু।
পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায়।
কালোজিরা যৌন ব্যাধি ও স্নায়ুবিক দুর্বলতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য অতি উৎকৃষ্ট ঔষধ।
পাকস্থলীতে বায়ু সঞ্চয় (অম্লপিত্ত) শুলবেদনা ও প্রসূতি রোগে অত্যধিক উপকারী।
সন্তান প্রসবের পর কাঁচা কালোজিরা পিষে খেলে শিশু বেশি পরিমাণে দুধ পায়।
কালোজিরা শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে।
কালোজিরা মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণহারে।
দাঁতে ব্যাথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যাথা কমে; জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণুও মরে।
কালোজিরা কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে।
কালোজিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অজির্ত হয়।
যাদের শরীরে পানি জমে, হাত পা ফুলে যায়, কালোজিরা এই পানি জমতে বাঁধা দেয়।
কালোজিরার তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তিময় নিদ্রা হয়।
প্রস্রাব বৃদ্ধির জন্য কালোজিরা খাওয়া হয়।
আবার মুদরে হায়েজ বা অধিক ঋতুস্রাব, মুদরে বাওল বা মাত্রাতিরিক্ত পেশাব প্রতিরোধ করে কালোজিরা।
বহুমুত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।
প্রতিদিন সকালে এক চিমটি কালোজিরা এক গ্লাস পানির সাথে খেলে ডায়াবেটিকস রোগীর রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কালোজিরা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি দূর করে।
এতে শেষ্মা, পুরাতন জ্বর, মূত্রথলির পাথর ও পান্ডুরোগ (কামিলা, জন্ডিস) আরোগ্য লাভ করে।
মোটা হওয়ার জন্যও কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে।
কালোজিরা চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌছেঁ দিয়ে চুলপড়া বন্ধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
কালোজিরা হরমোন সমৃদ্ধ হওয়ায় পুরুষত্ব হীনতায় বা নারী পুরুষের যৌন অক্ষমতায় নিয়মিত খেলে যৌন অক্ষমতা দূর হয়।
ব্রুনের জন্য উত্তম ঔষধ কালোজিরা।
কালোজিরা রিউমেটিক এবং পিঠে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
দেহের কাটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে।
কালোজিরা লিভারের সমস্যা দূর করতে বেশ উপকারি।
কালোজিরা ক্রিমিনাশক ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কালোজিরায় যেসব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমানঃ
• প্রোটিন ২০৮ মাইক্রোগ্রাম
• ভিটামিন বি ১.৫ মাইক্রোগ্রাম
• নিয়াসিন ৫৭ মাইক্রোগ্রাম
• আয়রন ১০৫ মাইক্রোগ্রাম
• কপার ১৮ মাইক্রোগ্রাম
• জিংক ৬০ মাইক্রোগ্রাম
• ফসফরাস ৫.২৬মিলিগ্রাম।
• ফলাসিন ৬১০ আইইউ
কালোজিরার ব্যবহারঃ
কালোজিরা কাঁচা অথবা ভাঁজা অবস্থায় খাওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও এর তেলও বিভিন্নভাবে ব্যবহার বা খাওয়া হয়;
দৈনন্দিন যে কোন খাবারের সাথেই কালোজিরা খাওয়া এবং প্রয়োজন অনুযায়ী শরীরেও ব্যবহার করা যায়;
কালোজিরা চা এর সাথে খাওয়া যায়;
ডাল, সবজী, মাছ, গোশত-এর তরকারিতেও কালোজিরা খাওয়া যায়;
কালোজিরা পুদিনা পাতার সাথে খাওয়া যায়;
কালোজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়;
পেঁয়াজ রসুনের সাথে কালোজিরা খাওয়া যায়;
গাজরের সাথেও কালোজিরা খাওয়া যায়।
হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন রোগ-যন্ত্রণা খুব বেশী কষ্টদায়ক হয়, তখন এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা নিয়ে খাবে অতঃপর পানি ও মধু সেবন করবে। – মুজামুল আওসাতঃ তাবরানী।
কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে যে কোন জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেহকে প্রস্তুত করে তোলে। তাই আমরা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত কালোজিরা সেবন করব।
#কালিজিরা, উপকারীতা, ওষুধ, #রোগ, #স্বাস্থ্য, #উপকারীতা, #কালোজিরার #গুনাগুন, কালোজিরা কি? #কালজিরা, কালোজিরার গুণাবলী কি কি?
No comments:
Post a Comment