সন্তান জন্মদা‌নে অক্ষমতার কার‌নসমূহ

সন্তান দে‌রি‌তে হওয়া বা সন্তান না হওয়ার পেছ‌নে বি‌ভিন্ন সমস্যা থা‌কে। এসব সমস্যা ছে‌লে বা মেয়ে যে কোন একজনের হ‌তে পা‌রে আবার একই সা‌থে উভয়ের সমস্যাও দেখা যায়। অথচ বাচ্চা না হওয়ার কারণ হিসেবে অধিকাংশ সময় মেয়েদেরই ঢালাওভাবে দায়ী করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। যা সমস্যা‌কে আরও বে‌শি বা‌ড়ি‌য়ে দেয়।

পৃথিবীজুড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছর সন্তান ধারণ ক্ষমতা বা প্রজনন সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেন। প্রজনন অক্ষমতা বিশ্বজুড়ে একটি চ্যালেঞ্জ। এর প্র‌তিকা‌রের জন্য আপনাকে ধৈর্য্যশীল, ধীরস্থির, সহযোগী মনোভাবাপন্ন হ‌তে হ‌বে এবং প্রজনন অক্ষমতা বিষয়ক পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হ‌বে; তাহ‌লে এই সমস্যা সমাধানের জন্য বি‌শেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
সন্তান ধার‌ণে নারীর ভূ‌মিকাই মুখ্য। একজন নারী হিসেবে পূর্ণতা পাওয়ার মূল বিষয়টিই হচ্ছে নিজের গর্ভে সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা। য‌দিও সমস্যা‌টি পুরুষেরও হ‌তে পা‌রে কিন্তু
নারীর সন্তান ধারণ ক্ষমতা সংক্রান্ত সমস্যাই বে‌শি দেখা যায়। আজকাল প্র‌তি ৩ জন নারীর মধ্যে ১ জন নারীই গর্ভধারণ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

তাই কোনো ধরণের সমস্যা নজরে পড়লেই যতো দ্রুত সম্ভব অ‌ভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
আপ‌নি য‌দি প্রজনন সমস্যার মুখোমুখি হোন ! তবুও আপনাকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগুতে হবে। বিচ‌লিত না হ‌য়ে সমস্যা সমাধা‌নে ম‌নো‌যোগী হ‌তে হ‌বে। বর্তমান যু‌গের প্রাথ‌মিক পদ্ধ‌তি থেকে শুরু করে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক আধুনিক পদ্ধতি প্র‌য়ো‌গের মাধ্যমে প্রজনন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

যখন কোনো দম্পতিকে প্রজনন সমস্যা বা বন্ধাত্বের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, তখন পুরুষদের পরীক্ষাই আগে করানো দরকার, অবশ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাই করে থাকেন।
সন্তান ধারণ বা জন্মদা‌নে অক্ষমতার চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা য‌দি স‌ঠিক ও নিয়মানুযায়ী করা হয়, ত‌বে দম্পতি অবশ্যই সন্তান জন্মদা‌নে সমর্থ হ‌বে। 

কোনো দম্পতি এক বছরেরও অধিক সময়ের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে চেষ্টা করেও সন্তান লাভে ব্যর্থ হলে চিকিৎসকের সরণাপন্ন হওয়া উচিত। সাধারণত দুই বছর কোনো প্রকার জন্মনিরোধক ব্যতিরেকে শারী‌রিক সম্পর্ক করলে শতকরা নব্বই ভাগ দম্পতিই সন্তান লাভে সক্ষম হয়।

আধু‌নিক যু‌গের বি‌ভিন্ন প্রজনন সমীক্ষাগু‌লো‌তে দেখা যায় যে, অর্ধেকেরও বেশি বন্ধ্যাত্ব ঘটে নারীদের বিভিন্ন জটিলতার কারণে। এরপর রয়েছে পুরুষের শুক্রের সমস্যা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অজানা কারণেও বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে।
বর্তমানে আমা‌দের দেশসহ বিভিন্ন দেশে বন্ধ্যাত্বের হার বেড়ে গেছে। প্রথম সন্তান ৩০ বছরের বেশি বয়সে হওয়ার কারণে বর্তমানে বন্ধ্যাত্বের সংখ্যা ৩ থেকে ৫ শতাংশ। কনডম এবং জরায়ুর ভেতরে ব্যবহৃত বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি বেশি থাকার কার‌নেও সন্তান ধারণে অক্ষমতা বা বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে।
কোনো জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি ছাড়া নিয়মিত যৌনমিলনের পরেও গর্ভধার‌ণের ব্যর্থতাকে বন্ধ্যাত্ব বলে। বন্ধ্যাত্ব হ‌চ্ছে সন্তান ধারণ বা সন্তান জন্মদা‌নের অক্ষমতা। বন্ধ্যাত্ব দুই ধরনের হ‌য়ে থা‌কে- ১৷ প্রাইমারি ও ২৷ সেকেন্ডারি।
নারীরা সাধারণত যেসব কার‌ণে সন্তান গর্ভধারণ বা জন্মদা‌নের ক্ষমতা হারাতে পারেন:

* গর্ভধারণে বি‌ভিন্ন প্রতিবন্ধকতা:
গর্ভসঞ্চার বা গর্ভধারণের যেসব পদ্ধতি তা আপাত:দৃষ্টিতে সরল মনে হলেও তা যে সবসময় ওই সরল পথে চলবে তা নয়। ব্যক্তির বয়স, জীবনযাত্রার ধরন শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি প্রজনন অক্ষমতার কারণ হতে পারে।

* হরমনজ‌নিত সমস্যা
যেহেতু আমাদের দেশে হরমোনজনিত রোগের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থা নাজুক এবং এর চিকিৎস‌কেরা অনেকেই এ ব্যাপারে ভালোভাবে অবহিত নন, কাজেই হরমোনজনিত রোগের কারণে বন্ধাত্বের বিষয়টি অনেকেরই দৃষ্টি এড়িয়ে যায়।
হরমোনজনিত কারণে মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব হলে সাধারণত তাদের মাসিক অনিয়মিত হয়, যৌবনপ্রাপ্তি স্বাভাবিকভাবে বা স্বাভাবিক সময়ে হয় না, অনেক সময় এসব মহিলার মুখে গোঁফ-দাড়ির মতো চুল গজাতে পারে এবং থাইরয়েড রোগের লক্ষণ দেখা যায়। 

* ডিম্বাণুর উৎপাদন হ্রাস পাওয়া
নারীদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিম্বাণু তৈরির ক্ষমতা ও সুস্থ স্বাভাবিক ডিম্বাণুর পরিমাণ কমে যেতে থাকে। সে কারণে বয়স একটু বেশী হয়ে গেলে সন্তান ধারণ করার ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশংকা দেখা দেয়। বিশেষ করে বয়স যখন ৩৫ বছর হয়, এরপর নারীদের জন্য সন্তান ধারণ অ‌নেক কঠিন হ‌য়ে যায়।

* ওভুলেটিং সমস্যা
অ‌নেক সময় ওভারি প‌রিপূর্ণ ও সুস্থ সবল ডিম্বাণু তৈরি না করতে পারে না। এটা নারী‌দের বন্ধ্যাত্ব তৈরি করতে পারে। মাসিকে অনিয়ম, মাসিক না হওয়া এই সমস্যার প্রধান লক্ষণ।
এই সমস্যার সমাধা‌নে ওজন সঠিক রাখার চেষ্টা করতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রজনন সংক্রান্ত পরামর্শ নিয়ে ফার্টিলিটি ঔষধ সেবন করতে হ‌বে।

* এন্ডোমেট্রিওসিস
এন্ডোমেট্রিওসিস সমস্যার কারণে অনেক সময় নারীরা সন্তান ধারণ ক্ষমতা হারাতে পারেন। যখন এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু ইউটেরাসের পরিবর্তে দেহের অভ্যন্তরে অন্য স্থানে তৈরি হয় তখন এই সমস্যা দেখা দেয়। পেলভিক অংশে প্রচণ্ড ব্যথা, মাসিকের সময় খুবই অস্বাভাবিক ব্লোডিং থাকা এবং যৌন মিলনে অতিরিক্ত ব্যথা; এসব সমস্যা অবহেলা না করে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

* পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম
যখন ওভারির ভেতরের ছোট্ট ফলিকলগুলো বড় হওয়া ও পরিপূর্ণ হওয়া বন্ধ করে দেয় তখন এই সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার পেছনের মূল কারণ হচ্ছে হরমোনের ভারসাম্য না থাকা। অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া, দেহ ও মুখের লোম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়া এবং অনিয়মিত মাসিক এই সমস্যার প্রধান লক্ষণ।

* ফেলোপেন টিউব সমস্যা
নারীরা তা‌দের সন্তান ধারণ ক্ষমতা হারাতে পারেন ফেলোপেন টিউব সমস্যার কার‌ণে। অনেক সময় এই ফেলোপেন টিউব ব্লক এবং নষ্ট থাকলে সন্তান ধারণ ক্ষমতা গড়ে উঠে না। যৌন মিলন সংক্রান্ত রোগ, পেলভিক ইনফ্লেমেটরি রোগ এবং স্টেরিলাইজেশন সার্জারির কারণে এই ফেলোপেন টিউব সমস্যা দেখা যায়।

এছাড়াও বন্ধাত্বের আরও অনেক কারণ আছে,
যেগুলো কোনো না কোনো হরমোনজনিত রোগের জন্য হয়ে থাকে।
বন্ধাত্বের বেশির ভাগই শরীরের গঠনতান্ত্রিক সমস্যার জন্য হয়ে থাকে এবং কোনো অভিজ্ঞ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা ইউরোলজিস্টই তা ভালোভাবে বুঝতে বা চিকিৎসা করতে পারেন।

আপনি সন্তান উৎপাদনে সক্ষম কি না জেনে নিন
আপনি সন্তান উৎপাদনে সক্ষম কি না তা কয়েকটি প্রশ্নমালার উত্তর থেকে জানা যেতে পারে। চিকিৎসকের সহায়তার পাশাপাশি আপনি বা আপনার স্ত্রীর সন্তান না হওয়ার সম্ভাব্য কারণ বা সম্ভাব্য চিকিৎসা কৌশল নিয়ে ভাবতে পারেন। সন্তান না হওয়ার জন্য নিজেকে অপরাধী ভাববেন না বা একে অপরকে দোষারোপ করবেন না। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। 

স্বামী বা স্ত্রী নি‌জেই নি‌জে‌কে নি‌চের প্রশ্নগুলো করুন, তারপর সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন। 

যথেষ্ট সুস্থ শুক্র আছে কি?
নারীর ডিম্বকে নিষিক্ত করার জন্য একজন পুরুষকে অবশ্যই যথেষ্ট সক্রিয় এবং পরিণত শুক্র উৎপাদনে সক্ষম হতে হবে।
ডিম্ব নিঃসৃত হয়েছে কি?
ডিম্ব ও শুক্রের মিলনের জন্য ডিম্বাশয় থেকে একজন নারীর ডিম্ব নিয়মিত নিঃসৃত হওয়া আবশ্যক।
শুক্র ও ডিম্ব মিলিত হতে পারছে কি?
শুক্র ও ডিম্বের মিলনের জন্য উভয়কেই পুরুষ বা নারীর প্রজননতন্ত্রে বাধাহীনভাবে চলাফেরার সুযোগ থাকতে হবে। এদের চলার পথে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে।
ভ্রুণ কি প্রতিস্থাপিত হতে পারে?
একটি ভ্রুণকে অবশ্যই জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হতে সক্ষম হতে হবে।
বয়স কি প্রজননকে ব্যাহত করছে?
৩৫ বছর বয়সে নারীদের ডিম্বের সংখ্যা ও মান যথেষ্ট কমে যায়। ৪০ বছর বয়সে এই সমস্যা আরো বেড়ে যায়। এ কারণে একজন নারীর বয়স যদি ৩৫ বছরের বেশি হয় তাহলে তার কেন সন্তান হচ্ছে না তা মূল্যায়নে কখনো বিলম্বিত করা উচিৎ নয়। 

একজন পুরুষ সারা জীবন শুক্র উৎপাদন করতে পারে। সুতারং প্রজনন সমস্যায় পুরুষের বয়স কোনো বিষয় নয়। একটি শিশু ধারণের জন্য একজন নারীর ওভারি থেকে অবশ্যই একটি পরিপক্ক ডিম্বক নিঃসৃত হতে হবে। এই ডিম্বক তার ফেলোপিয়াল নালীতে সুস্থ শুক্রাণুর জন্য অপেক্ষা করে যৌনমিলনের সময় পুরুষ প্রায় ১০ মিলিয়ন পরিণত এবং স্বাভাবিকভাবে নগনক্ষম শুক্রাণু নিঃসৃত করে। এদের মধ্যে একটি শুক্রাণু ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে পারে। নিষিক্তকরনের পর ডিম্বানু গর্ভাশয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এই সময়ে গর্ভফুলের মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে এবং অন্যান্য জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদন করে। কিন্তু পেলভিক সংক্রামণের কারণে ফেলোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হলে ডিম্বক নিষিক্তকরণ বা প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়।

কিছু অভ্যাস বা প্র‌তি‌ক্রিয়া গর্ভধারনের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃ‌ষ্টি কর‌তে পারে:

ধূমপান:
ধূমপানের কারণে নারীদের ইস্ট্রোজেনের মাত্রার পরিবর্তন এবং ডিম্বের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। জরায়ু গ্রীবার শ্লেষ্মার নিকোটিনের উপস্থিতি শুক্রের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। অন্যদিকে ধূমপানের কারণে পুরুষদের শুক্রের সংখ্যা কমে যায়, শুক্রের চলাচল ব্যাহত হয় এবং অস্বাভাবিক আকৃতির শুক্র তৈরি হয়। 

মাদকদ্রব্য গ্রহন:
সবধর‌ণের নেশা বা মাদক প‌রিহার কর‌তে হ‌বে।  যেমন, মদ্যপানের ফলে শুক্রের সংখ্যা কমে যায় এবং অস্বাভাবিক শুক্র উৎপাদিত হয়। মারিজুয়ানা এবং কোকেনের ব্যবহারে নারীদের হরমোন উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে এবং পুরুষের শুক্র উৎপাদন হ্রাস পায়।

অণ্ডকোষের তাপ:
পুরুষের অণ্ডকোষ সারাদেহের তাপমাত্রার তুলনায় কয়েক ডিগ্রি শীতল। অণ্ডকোষ যখন খুব বেশি গরম থাকে শুক্রের উৎপাদন হ্রাস পায়। বেশি তাপমাত্রা, প্যান্টি পরিধান ইত্যাদি অণ্ডকোষের তাপ বৃদ্ধি করতে এবং প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। 

ওজনের সমস্যা:
যেসব নারী বেশি স্থুলকায় (Overweight) অথবা কম ওজনের, তারা প্রায়ই গর্ভধারণে সমস্যায় পড়েন। খুব বেশি অথবা খুব কম চর্বি হরমোন মাত্রাকে প্রভাবিত করে এবং ডিম্বক্ষরণে সমস্যা সৃষ্টি করে।

কঠোর প‌রিশ্রম ও ব্যায়াম:
অ‌তি‌রিক্ত ক‌ঠোর শ্রম বা ঘন ঘন কঠোর ব্যায়াম (যেমন প্রতিদিন লম্বা পথে দৌঁড়ানো) নারীদের হরমোন উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হতে পরে, নারীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কঠোর কাজ ও ব্যায়াম অনিয়মিত মাসিক অথবা রজঃবদ্ধতার কারণ হতে পারে। এর ফলেও প্রজনন সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

অন্যান্য কারণ:
সন্তানধারণে সমস্যা সৃষ্টি করছে এমন আরো কিছু কারণ নিয়ে চিকিৎসক আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কিছু তৈলাক্ত পদার্থ শুক্রাণু জখম বা ধ্বংস করে ফেলতে পারে। কিছু ওষুধ সেবনের ফলে হ্রাস পেতে পারে শুক্রাণুর সংখ্যা। অনেক নারীর ক্ষেত্রে, উদ্বেগ ও অবসাদজনিত কারণে ডিম্বক্ষরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।


গর্ভধারণ বা গর্ভসঞ্চারের সমস্যা সমাধা‌নের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ:
গর্ভধার‌ণে সমস্যা বা বন্ধাত্বের চিকিৎসায় রোগী এবং চিকিৎসক উভয়কেই ধৈর্য ধারণ ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। রাতারাতি সমস্যার সমাধান হবে এমনটি আশা করা যায় না। সহসাই ব্যয়বহুল কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেয়ে অনেক সময় ধৈর্য ধারণ করাই বেশি যুক্তিযুক্ত। উদাহারণস্বরূপ বলা যেতে পারে, যেসব দম্পতি টেস্টটিউব বেবির জন্য অপেক্ষমাণ থাকে, তাদের প্রায় শতকরা ১৫ ভাগ অপেক্ষাকালীন সময়েই কোনোরূপ চিকিৎসা ছাড়াই গর্ভবতী হয়ে থাকেন। কাজেই বন্ধাত্বের চিকিৎসায় যুক্তিসঙ্গতভাবে অপেক্ষা করাও অনেক সময় চিকিৎসার পর্যায়েই পড়ে। তবে অবশ্যই কোনো বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকেই তা করতে হবে।


আপনার বয়স, স্বাস্থ্য এবং কতদিন ধরে গর্ভধার‌ণের চেষ্টা করছেন তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক আপনাদের গর্ভধার‌ণের সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্য প্রথমে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেবেন, যা ফলপ্রসূ হতে পারে। একজন নারীর উর্বর সময় (Fertile time) শনাক্তকরণের বহুবিধ পদ্ধতি রয়েছে।

নির্ধারিত সময় হতে পারে মূল চাবিকাঠি: 
ডিম্বক্ষরণ (Ovulation) হচ্ছে এ রকম কোনো নারীর দ্বারাই কেবল গর্ভধারণ করা সম্ভব, ডিম্বক্ষরণের ঠিক আগে বা ক্ষরণকালীন যৌনসঙ্গম গর্ভসঞ্চারের সর্বোত্তম সুযোগ সৃষ্টি করে। কিছু আলামত দেখে ডিম্বকরণের সময় চিহ্নিত করা যায়। এসব আলামতের মধ্যে আছে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, গ্রীবাদেশীয় শ্লেষ্মার (Cervical mucous) পরিবর্তন এবং Luteinzing hormone বা LH-এর আকষ্মিক বৃদ্ধি।
১। দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি:
হরমোনের মাত্রা বাড়ার কারণে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা (Basal body temperature) ডিম্বকরণের ঠিক আগে নেমে যায়। এই তাপমাত্রা আবার বেড়ে যায় ডিম্বকরণের ঠিক পরে। প্রজেস্টেরন (Progesterone) হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার দিনটিতে অথবা তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের চেষ্টা করুন।
২। জরায়ুগ্রীবার শ্লেষ্মা পরিবর্তন:
জরায়ু গ্রীবার শ্লেষ্মা সাধারণভাবে ঘন ও ঘোলাটে থাকে। ডিম্বক্ষরণের পূর্বে অথবা ঋতুচক্রের নবম অথবা দশম দিনে এই শ্লেষ্মা পরিষ্কার এবং প্রসারণক্ষম হয়ে ওঠে যেন শুক্র ফেলোপিয়ান টিউবের পথে যাত্রা করতে পারে। শ্লেষ্মার এই পরিবর্তন আপনার চোখে ধরা পড়ার এক অথবা দু’দিনের মধ্যে যৌনমিলনের চেষ্টা করুন। অথবা শ্লেষ্মা পুনরায় ঘন না হওয়া পর্যন্ত একদিন অন্তর যৌনমিলন করুন।

সঠিক সময় সম্পর্কে স‌ঠিক ধারনা:
তাপমাত্রা সম্পর্কে সবচাইতে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য বিদেশে মার্কারি থার্মোমিটার (এতে একশটি চার্টও থাকে) অথবা ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ডিম্বকরণ সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদানকারী যন্ত্রাদিও কিনতে পাওয়া যায়। আপনি যদি দেহের তাপমাত্রা দেখতে চান তাহলে সবসময় সকালে ঘুম থেকে ওঠে কোনো কাজ শুরু করার আগেই তাপমাত্রা নেবেন। আপনি যদি অসুস্থ থাকেন এবং রাতে অস্থির সময় কাটিয়ে থাকেন তবে তাপমাত্রার হেরফের হতে পারে। বিষয়টি চার্টে লিপিবদ্ধ করতে ভুলবেন না। যদি যোনি থেকে বিন্দুপাতন (Spotting) অথবা অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয় সেটাও লিপিবদ্ধ করুন এবং চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। ডিম্বক্ষরণের সম্ভাব্য সময়কালে প্রতি একদিন অন্তর যৌনমিলনে সচেতন হোন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন অথবা স্বাস্থ্য বিষয়ক অভ্যাস বদলালে গর্ভধারণ বা সন্তান উৎপাদন সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 

আপনা‌কে অবশ্যই মনে রাখতে হ‌বে যে, আপনি এককভাবেই কেবল এই সমস্যার শিকার নন। পৃথিবীতে আরো অসংখ্য দম্পতি আছে যারা স্বাভাবিকভাবে সন্তানের মাতৃত্ব বা পিতৃত্ব অর্জন করতে পারেননি অথবা সঠিক কোন পদ্ধ‌তি গ্রহ‌নের মাধ্য‌মে তা পে‌য়ে‌ছে। সুতরাং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অন্যকোনো পদ্ধতিতে সন্তানের মা হতে চেষ্টা করুন। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন তা আপনাদের পারিবারিক জীবনকে আনন্দময় করে তুলবে।

No comments:

Post a Comment