বিয়ের পরে প্রথম কয়েকটা বছর বেশ ভালোই কাটে যেকোনো স্বামী-স্ত্রীর। একটা পর্যায়ে গিয়ে অনুভব করে সংসারে একজন নতুন অতিথি আসা দরকার। হ্যাঁ, সন্তানের আবশ্যকতা থেকেই বংশবিস্তার ঘটে। এগিয়ে যায় মানব প্রজন্ম।
তবে সব দম্পতি সন্তান ধারনের ইচ্ছা পোষন করলেও অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় বেশ কিছু জটিলতা। সঠিক চিকিৎসা, সঠিক সময়ে বিয়ে হওয়া, সঠিক সময়ে সন্তানধারণ ও সুন্দর স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন মেনে চললে এই জটিলতাকে অনেক ক্ষেত্রে জয় করা সম্ভব বলে মনে করেন দেশের তরুণ ও সুপরিচিত পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান ।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আজকাল অনেকেই সন্তান ধারনে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, এর প্রধান কারণগুলো কী কী?
তামান্না চৌধুরীঃ নানা কারণে সন্তান না হওয়ায় আজকাল সমস্যা হয় বলে মনে করা হয়। শারিরীক সমস্যা ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষকেই দায়ী করা হয় যেমন: ধূমপান ও মাদক গ্রহণ, সঠিক বয়সে বিয়ে না হওয়া ও সন্তান না নেওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, মানসিক অশান্তি বা ডিপ্রেশনে ভোগা ইত্যাদি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ সন্তান হচ্ছে না, এ ক্ষেত্রে আপনি সাধারণত যেসব রোগী পান তাদের কেস হিস্ট্রি কেমন?
তামান্না চৌধুরীঃ সমস্যা নারী- পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। আমাদের সমাজে কুসংষ্কার আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে থাকায় অনেকে সন্তান না হওয়ার দায়ভার শুধু মেয়েদের ওপর চাপায়। এটা কাম্য নয়। নানা কারণে সন্তান ধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকে বিয়ের পর দেরি করে বাচ্চা নেয়। তখন দেখা যায় সে গর্ভধারণ করার সক্ষমতা রাখছে না। আবার অনেকে অল্প বয়সে বিয়ে করল। প্রথম দিকে অ্যাবরশন (গর্ভপাত) করালো। এ রকম ক্ষেত্রেও অনেক সময় পরবর্তীতে সন্তান ধারণে সক্ষমতা থাকেনা। নারী বা পুরুষ যে কারো ক্ষেত্রে বা দুজনেরই ওজন বেশী হওয়া সন্তান ধারণে সমস্যার জন্য অন্যতম কারণ হতে পারে।
আমাদের কাছে যেসব কেসগুলো আসে তাতে দেখা যায়, যাদের ওজন বেশি, ওভাম বা স্পার্ম কাউন্ট কম, অতিরিক্ত বা ওজন বেশি হওয়ায় হরমোনাল চেঞ্জ হয় ইত্যাদি। নারীদের ক্ষেত্রে ওজন বেশী হলে পিরিয়ডে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারনত আমাদের কাছে যেসব রোগী আসে তাদের কাছেই আমরা এসব কেস হিস্ট্রি পাই।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বন্ধ্যত্বের সমস্যা কি জয় করা সম্ভব?
তামান্না চৌধুরীঃ অবশ্যই সম্ভব। সামান্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই এই সমস্যা জয় করতে পারে। যেমন: অনেক মেয়েদের অতিরিক্ত ওজন হওয়ার কারণে সন্তান ধারন করতে পারছে না। তারা যদি সঠিক ভাবে নিয়ম মেনে বিশেষজ্ঞের উপদেশ মতো চলে ওজন কমাতে পারে, তবে খুব সহজেই সে গর্ভবতী হতে পারে। এছাড়া সঠিক সময়ে বিয়ে করা, অতিরিক্ত কাজের চাপ না নেওয়া বা কাজের মাঝে বিশ্রাম নেওয়া, মানসিকভাবে প্রশান্তিতে থাকা, স্বামী- স্ত্রীর ভাল বোঝাপড়া, সুষম খাদ্য গ্রহণ করা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করাও জরুরি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন বলতে কী বুঝাচ্ছেন?
তামান্না চৌধুরীঃ পুরুষদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন বলতে বুঝাচ্ছি ধূমপান না করা ও সব ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা। দূষণ ও বিষাক্ত পদার্থ থেকে দূরে থাকা, যে সব ওষুধের ব্যবহারে সমস্যা দেখা দেয় তা এড়িয়ে চলা, ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা, খাবার ও ঘুমসহ সবকিছুতে নিয়ম মেনে চলা। নারীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যায়াম করা, ( আমরা প্রতিদিন এক ঘন্টা হাঁটার পরামর্শ দিই।) মেদবৃদ্ধি ও স্থুলতা প্রতিরোধ করা, ক্যাফেইনযুক্ত দ্রব্যের ব্যবহার সীমিত করা, ধূমপান ও মাদক এড়িয়ে চলা, হাসি খুশী থাকা, সঠিক পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া। মূলত এসব নিয়ম মেনে চললে সন্তান না হওয়ার জটিলতা অনেকটাই কেটে যায়।
একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনাকে ধন্যবাদ। সুন্দর পরামর্শের জন্য।
তামান্না চৌধুরীঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। একুশে পরিবারের জন্য শুভেচ্ছা।
‘‘তামান্না চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানে এমএসসি ডিগ্রী অর্জন করার পর, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পোষ্ট গ্রাজুয়েট করেছেন ডায়াবেটিস শিক্ষা বিষয়ে। এ পুষ্টিবিজ্ঞানী দীর্ঘ ১৪ বছরের বেশী সময় ধরে দক্ষতার সঙ্গে ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ্যায় কাজ করে যাচ্ছেন। তামান্না চৌধুরী আন্তর্জাতিকভাবে কেস উপস্থাপনায় অংশগ্রহণ করে প্রশংসিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন পত্রিকা, অন লাইন নিউজ, ম্যাগাজিনে তার ৫২০টিরও বেশি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
ইএসপিএন আয়োজিত বিশ্ব পুষ্টি জরিপ সনদে তামান্না চৌধুরী চারবার টিমলিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অংশ নেন ২১ টিরও বেশি আন্তর্জাতিক পুষ্টিবিদ্যা সংক্রান্ত সেমিনারে। পুষ্টি ও অভ্যন্তরীণ পুষ্টি সংক্রান্ত সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ পুষ্টিবিদ বক্তা হিসেবে ৬৩ টির ও বেশী কর্পোরেট হাউজে ( ইউএস এম্বাসি, সেভরন, ইউনিসেফ, ইউনিলিভার,বাংলালিংক, বিপিডিবি) স্বাস্থ্য বিষয়ক বক্তব্য দিয়েছেন।’’
No comments:
Post a Comment