স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার

স্তন ক্যান্সার একটি ভয়ংকর রোগ। ত‌বে সহজেই চিকিৎসা করা সম্ভব এবং ৯০% ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুস্থ করাও সম্ভব হয়- যদি প্রাথমিক পর্যায়েই সেটা চিহ্নিত করা যায়। আর প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার চিহ্নিত করার সহজ উপায় হলো নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা। ১৫ থেকে ৪৫ বা ৫০ বৎসরের সকল মহিলাদের উচিত নিয়মিত প্রতিমাসে একবার করে নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করা। যারা পর্ভবতী বা বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করান তাদের উচিত নিয়মিত চিকিৎসক দ্বারা স্তন পরীক্ষা করান। স্বাভাবিক সময়ে স্তন পরীক্ষার উপযুক্ত সময় হলো মাসিকের ৩ থেকে ৫ দিন পর।


স্তন ক্যান্সার চিহ্নিত করার উপায়ঃ
স্তন পরীক্ষা করা খুবই সহজ একটি কাজ। সাধারন কয়েকটি ধাপে এটা করা সম্ভব। নিম্নে স্তন ক্যান্সার চিহ্নিত করার প্রাথ‌মিক উপায় আলোচনা করা হলোঃ
ধাপ ১: আয়নার সামনে কাধ সোজা করে দাঁড়ান, কোমরে হাত রাখুন ও আপনার স্তনের দিকে তাকান। এবার লক্ষ্য করুন:
১. আপনার স্তনের আকার, আকৃতি ও রং।
২. স্তনদ্বয় কোন দৃশ্যত ফোলা স্থান অথবা বিকৃতি ছাড়া একই আকৃতির আছে কিনা।

নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলো লক্ষ করলে অতিস্বত্তর চিকিৎসকের পরামর্শ নিনঃ
১. কুঁচকানো, ফোলা চামড়া অথবা চামড়াতে ডিম্পল (অনেকটা কমলা লেবুর খোসার মত)।
২. স্তনের কোথাও ক্ষত অথবা লাল স্থান অথবা ফোলা স্থান।
৩. স্থান পরিবর্তিত নিপল অথবা কুচঁকানো অথবা ভিতরে ঢুকে যাওয়া নিপল।

ধাপ ২: এবার দু’হাত মাথার উপর তুলুন ও পূর্ববর্তী ধাপে বর্ণিত পরিবর্তন গুলো আবারও লক্ষ করূন।
ধাপ ৩: এবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই লক্ষ করুন আপনার নিপল থেকে (একটি অথবা দু’টি থেকেই) কোন ধরনের তরল জাতীয় কিছু (যেমন পানির মত অথবা হলদে অথবা রক্ত) বের হচ্ছে কিনা।
ধাপ ৪: এবার শুয়ে পড়ুন এবং আপনার ডান হাত দিয়ে বাম স্তনে চাপ দিন। এক্ষেত্রে আপনার হাতের আঙ্গুলগুলো একসাথে করে ব্যবহার করুন (হাতের তালু নয়)। ধীরে ধীরে চাকতির মত করে হাত ঘুরান ও অনুভব করুন। এভাবে সম্পূর্ণ স্তনকে পরীক্ষা করুন (উপরের কলারবোন থেকে পেটের ওপর পর্যন্ত ও এক পাশ থেকে অন্য পাশ পর্যন্ত এবং অবশ্যই একই ভাবে বগল পরীক্ষা করুন)। একই ভাবে বাম হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করুন। এই পরীক্ষা করার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যাতে আপনার সম্পূর্ণ স্তনটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি নিপল থেকে শুরু করে বৃত্তাকার ভাবে বাহিরের দিকে যেতে পারেন অথবা উপর-নিচ করে সম্পূর্ণ স্তন পরীক্ষা করতে পারেন। লক্ষ্য রাখবেন যাতে আপনি সকল টিস্যু (চামড়া থেকে একদম স্তনের নিচের বুকের খাচা পর্যন্ত) অনুভব করেছেন। চামড়া ও চামড়ার অল্প নিচের অংশের জন্য অল্প চাপ দিন, স্তনের মাঝের অংশের জন্য মাঝারি চাপ দিন ও স্তনের নিচের অংশ অনুভবের জন্য গভীর ভাবে চাপ দিন।
ধাপ ৫: এবার আপনি বসে অথবা দাঁড়িয়ে পূর্ববর্তী ধাপে বর্ণিত উপায়ে আবার আপনার স্তনদ্বয় পরীক্ষা করুন। এই ধাপটি গোসল করার সময়ও করতে পারেন, কারন সে সময় চামড়া ভেজা ও পিছল থাকে ও করতে সুবিধা হয়।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রাথমিক উপায়ঃ
ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ডের সমীক্ষা মতে, বছরে প্রায় বিশ হাজার ব্রিটিশ মহিলা তাঁদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়িয়ে সুস্বাস্থ্যে জীবন যাপন করছে। জীবন যাপনের পরিবর্তন ঘটিয়ে আট ভাগের এক ভাগ নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়িয়েছে।
আসলে একক কোনও কারণে এটা সংঘটিত হয় না বলে মন্তব্য করেছেন বিখ্যাত ব্রেস্ট ক্যান্সার সার্জন লিস্টার বার। তার মতে, “স্তন ক্যান্সার আপনার জিনের পরস্পরতা দ্বারা সংঘটিত হয়, পরিবেশ ও জীবন যাপন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।” তারপরও আপনি চাইলে এর ঝুঁকি সহজেই এড়াতে পারেন।

নিম্নে স্তন ক্যান্সার থেকে বাঁচার কিছু উপায় আলোচনা করা হলোঃ
১. স্তন সম্পর্কে সচেতনতাঃ কখনও যদি অস্বাভাবিক কোন পরিবর্তন আপনার স্তনে দেখতে পান। যেমন: আকৃতি ও জমিনে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. ঘরের কাজে নিযুক্ত থাকুনঃ অনেক সময় দেখা যায় শহরের নারীরা আরাম আয়েশে জীবন কাটায়। যারা নিজেরা কাজ করেন খুব কম। গৃহকর্মী দিয়ে সব কাজ করিয়ে নেন। এতে তাদের পরিশ্রম কম হয়। তবে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়াতে ঘরের কাজে নিযুক্ত থাকুন। গবেষণায় দেখা যায়, কর্মহীন নারীদের চেয়ে কর্মে নিযুক্ত নারীরা ঝুঁকি কমিয়েছে প্রায় শতকরা তেরো শতাংশ।
৩. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুনঃ বিভাগীয় প্রধান পাবলিক হেলথ ইন ব্রেকথ্রো ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রখ্যাত ব্রেস্ট ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ইলুনয়েড হিউজেস বলেন, “অতিরিক্ত মেদ আপনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, এখনই সময় মেদ কমান।”
৪. অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুনঃ বিভিন্নভাবে অ্যালকোহল সেবন হয়ে থাকে। যেমন: ড্রিংকস বা সরাসরি মদ্য পান থেকে বিরত থাকুন।
৫. শরীরে অতিরিক্ত কোন প্রতিস্থাপন খেয়াল রাখুনঃ অতি উচ্চ মাত্রায় ঔষধ সেবন অথবা হরমোন থেরাপি, ওয়েস্ট্রোজেন ইত্যাদি ঝুঁকি বহু মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় বলেছেন, লিস্টার বার।
৬. কর্মজীবীদের শিফটিং খেয়াল রাখতে হবেঃ একনাগাড়ে সপ্তাহে তিনদিন, এভাবে ছয় বছর নাইট ডিউটি করে গেলে অতিমাত্রায় ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটিই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এছাড়া কোলেস্টোরেল লেভেল নীচে রাখুন, আপনার শিশুকে দুধ খাওয়ান, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন, বৈচিত্রমূলক ও কালারফুল সব্জি খান, ভোজনে আঁশযুক্ত খাবার বেশি রাখুন, ব্যথানাশক ওষুধ পরিহার করুন, ভোরের সূর্য গায়ে লাগান।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পালন করলে আপনি অনেকটাই ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি মুক্ত হতে পারবেন। বিশেষজ্ঞদের এটাই মতবাদ।




#স্তন-ক্যান্সার , @breast-cancer #ব্রেস্ট-ক্যান্সার

No comments:

Post a Comment