সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া

মে‌য়ে‌দের বয়:স‌ন্ধি শুরু হ‌লে বি‌ভিন্ন নতুন বিষ‌য়ের উপলক্ষ সৃ‌ষ্টি হয়। যা প্রায়ই স্বাভা‌বিক রী‌তি‌তে ঘ‌টে থা‌কে। এস‌বের ম‌ধ্যে অন্যতম হ‌লো মে‌য়ে‌দের সাদা স্রাব। বি‌ভিন্ন কার‌ণে অবশ্য মা‌ঝে মা‌ঝে এস‌বের বিপরীত ক্রিয়াও লক্ষ করা যায়। আর তখন তা‌কে মে‌য়েলী সমস্যা হি‌সে‌বে চি‌হ্নিত করা হয়। ত‌বে যায়ই হোক না কেন, এসব ব্যাপা‌রে অ‌তির‌ঞ্জিত হওয়া যা‌বে না। সমস্যা ম‌নে হ‌লে ধীর‌চি‌ত্তে সমাধা‌নের পথ খুঁজ‌তে হ‌বে। প্র‌য়োজ‌নে চি‌কিৎস‌কের সরণাপন্ন হ‌তে হ‌বে। 

সাদা স্রাব বিষ‌য়ে ভুল ধারণাঃ
সাদা স্রাব নিয়ে অনেক মে‌য়ে‌দের অভিযোগের শেষ নেই। চিকিৎসকের কাছে গেলে অন্য সমস্যার পাশাপাশি তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বলে থাকেন এবং সে সঙ্গে এও বলেন যে, এর ফলে তাঁদের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে! এ কারণে তাঁরা মানসিকভাবেও
উৎকণ্ঠিত থাকেন। দেশের গ্রামগঞ্জ-হাটবাজারে এ সংক্রান্ত ছোট ছোট সাইনবোর্ড এবং বিভিন্ন ধরনের লিফলেট বিষয়টিকে আরও উসকে দেয়। সাদা স্রাবকে অনেকে ধাতু বলে থাকেন। এ বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করলে অনেক প্রশ্নের জবাব প‌রিষ্কার হ‌বে।

সাদা স্রাব কথনঃ
স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় মেয়েদের যোনিপথে এক ধরনের পিচ্ছিল রস তৈরি হয়। মুখের লালা, চোখের পানি প্রভূ‌তি যেমন স্বাভাবিক, যোনিরসও তেমনি একটি ব্যাপার। এটি যোনিপথের কোষের স্বাভাবিকতা রক্ষা করে, যৌনমিলনের সময় লুব্রিকেসনের কাজ করে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ রসের পরিমাণ মানুষভেদে ও বয়সভেদে কম-বেশি হতে পারে। যেমন- মাসিক শুরুর আগের বয়সে এবং মেনোপজের পর যোনিরস খুব অল্প নিঃসৃত হয়। আবার সম্যক ধারণার অভাবে স্বাভাবিক পরিমাণ রসকে অনেকের কাছে অতিরিক্ত সাদা স্রাব মনে হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, যো‌নি‌তে যখন যোনিরস বেশি নিঃসৃত হয়ে ভেজা ভেজা ভাব হয়, পরনের কাপড়ে হলদেটে দাগ পড়ে, তখনই কেবল সেটাকে সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া বলে। স্বাভাবিক পরিমাণ যোনিরস লিউকোরিয়া নয়। স্বাভাবিক স্রাবের সঙ্গে স্বাস্থ্যহানির বৈজ্ঞানিক কোনো সম্পর্কও নেই।

যো‌নিরস বৃ‌দ্ধি পাওয়ার কিছু সময়ঃ
মেয়েদের বিশেষ কতগুলো সময় আছে, যখন যোনি রসের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। যেমন- যৌনমিলনের সময়, মাসিক শুরুর ঠিক আগের দিনগুলোয়, ওভ্যুলেশনের (ডিম্বস্ফোটন) সময়, গর্ভাবস্থায়, ডেলিভারির পর বেশ কিছুদিন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার কালে ইত্যাদি। 

সতর্কতাঃ
অনেক মে‌য়ে আছে যারা স্বাভাবিক জৈবিক গন্ধকে দূর করার জন্য নিয়মিত স্যাভলন-পানি বা কেউ কেউ ডিওডোরান্ট স্প্রে ব্যবহার করেন। এ অভ্যাস ক্ষতিকর। এর ফলে কেমিক্যাল রি-অ্যাকশন হয়ে অঙ্গের ক্ষতি হয়। উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে ক্ষতিকর জীবাণুর সংক্রমণকে উৎসাহিত করে।

কখন বোঝা যাবে যে অসুস্থতার কারণেই স্রাব বেশি হচ্ছে?
যদি উপরিউক্ত সময় ছাড়াও অতিরিক্ত স্রাব নিঃসৃত হয়, চুলকানি হয়, ভীষণ দুর্গন্ধ হয়, সঙ্গে রক্ত কিংবা পুঁজ থাকে, তলপেটে ব্যথা থাকে, জ্বর থাকে। অস্বাভাবিক স্রাবের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে ইনফেকশন, পলিপ, ক্যানসার ইত্যাদি।

সঠিক তথ্য জানার পর প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে পেছনে ফেলে স্বাভাবিক স্রাবকে যেমন সহজভাবে গ্রহণ করা দরকার, তেমনি অস্বাভাবিক স্রাব হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াও জরুরি।

No comments:

Post a Comment