যৌন জীবন ও ক্রনস ডিজিস

গত ৩২ বছরে মাইকেল এ উইস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৫০ বারেরও বেশি সময়। তার অস্ত্রপচার হয়েছে ৩০ বারের মতো।
এ সবকিছুর কারণ হলো, ২১ বছর বয়স থেকে তিনি ক্রনস রোগে আক্রান্ত।
নিউ জার্সির এই ভদ্রলোক জানান যে, যৌন জীবনটা নিয়মিত রয়েছে তার। তবে কখনোই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। এখন তার বয়স ৫৩। জানালেন, আমি কেবল সেক্সই করেছি। কারো সঙ্গে অন্তরঙ্গতা ছিল না।
প্রায় সময়ই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতেন তিনি। কিছু হয়তো খেয়েছেন। আর সেক্স করার সময় বাথরুমে দৌড়াতে হলো। বয়স বাড়ার সঙ্গে এই অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ তার কাছে সহনীয় হয়ে উঠতে থাকে। কিন্তু এখনো তিনি অন্তরঙ্গ কোনো সম্পর্কে জড়াতে ভয় পান। যদি এই রোগ সম্পর্কের মাঝে চলে
আসে।

ক্রনস ডিজিস এবং সেক্স
এই রোগ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ট্র্যাক্টস-এ ক্রনিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। সাধারণত ৩৫ বছরের আগেই ধরা পড়ে এবং বয়সের সঙ্গে অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। নারী-পুরুষ উভয়ের মাঝেই সমানতালে দেখা যায়। ক্রনস অ্যান্ড কোলিটিস ফাউন্ডেশন অব আমেরিকা জানায়, সে দেশের ১.৬ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।
ক্রনস ডিজিসের লক্ষণ প্রকাশ পায় অ্যাবডোমিনাল পেইন, ডায়রিয়া, কনস্টিপেশন এবং রেক্টাল ব্লিডিংয়ের মধ্য দিয়ে। এই রোগে আক্রান্তরা রোগের বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে খুবই অস্বস্তিবোধ করেন।
আক্রান্তরা সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকেন। নতুন কোনো খাবার খাবেন কিনা তা নিয়ে দারুণ দুশ্চিন্তায় থাকেন। যেকোনো অনুষ্ঠান বা উপলক্ষে খাবার খাওয়ার আগে ভয় ধরে যায় তাদের। কিছু খেলেই মুহূর্তের মধ্যে তাদের বাথরুমে দৌড়াতে হয়। যৌনতাসহ জীবনটাই বেশ কঠিন হয়ে ওঠে।
আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। কারো কাছাকাছি হলেই সহজ বোধ করবেন না। যৌনকর্মের সময় অস্বস্তি কাজ করতে থাকবে। এসব জানান ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো মেডিসিনের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. ডেভিড রুবিন।
সেক্সয়াল পারফরমেন্সের দিক থেকে দারুণ ঝামেলায় পড়ে যান পুরুষরা। আকাঙ্ক্ষার অভাব, শারীরিক সমস্যা সবমিলিয়ে পেরেশানি দেয় অনেক। পুরুষরাই বেশি যৌন সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন। ৩৮ শতাংশ রোগী জানান, তারা যৌন সমস্যায় ভুগছেন। ২৬ শতাংশ জানান, এই রোগ তাদের রীতিমতো সেক্স থেকে দূরে রেখেছে। আর ১৮ শতাংশ যৌনকর্মের সময় বিভিন্ন ভীতিকর অবস্থায় পড়েছেন।

চিকিৎসক ও রোগীর একসঙ্গে কাজ করতে হবে
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিকিৎসকরা রোগীর যৌন জীবন নিয়ে কথা বলতে চান না। দেখা গেছে, ১৪ শতাংশ বিশেষজ্ঞ এ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু ৫৩ শতাংশ কোনো কথাই বলেন না। এ পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয় আমেরিকান কলেজ অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির ২০১৪ সালের সভায়।
চিকিছৎসকদের ২৭ শতাংশ এ নিয়ে কথা বলতে কোনো ঝামেলা নেই বলেই মনে করেন। আর ৩৮ শতাংশ এ নিয়ে কথা বলাটা সমস্যা বলেই মনে করেন। আর ২৫ শতাংশের কাছে রোগী নিজে থেকে বিষয়টি তুললে বেশ ভালো হয় বলে মত দেন।
তাই চিকিৎসকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা উচিত। তারা রোগীদের যৌন জীবনটাকে আরেকটু উপভোগ্য করার কৌশল বাতলে দিতে পারেন। তারা ক্রনস-এ আক্রান্তদের নিয়ে গড়ে ওঠা কোনো গ্রুপেরও তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এতে তারা বিভিন্ন ধরনের সহায়তা পাবেন।
উইস জানান, সেক্সুয়াল সমস্যা নিজে না মেটালে তা সহসা চলে যায় না। এ বছরের প্রথম দিকে আরেকটি সমস্যা ধরা পড়ে তার। তখন ভেবেছিলেন, আর কারো সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলা যাবে না।
এখন উইন এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। সেই ৩০ বছর আগে এই নারীর সঙ্গে ডেট করেছিলেন তিনি। তার কাছে নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
রুবিন জানান, এই রোগকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সামলে আনা যায়। একে নিয়ে একা একা বাস করা উচিত নয়। তাই একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করতে হবে। সুষ্ঠু চিকিৎসা নিতে পারলে অবশ্যই পরিত্রাণ মিলবে।

No comments:

Post a Comment