যখন কোন পুরুষ বা নারীকে ‘যৌন অক্ষম’ বলা হয় তখন এই শব্দটি কি বুঝাতে চায়? যৌন অক্ষম বললে কি কোন নর-নারী সম্পূর্ণরূপে যৌন-মিলনে অক্ষম তাই বুঝায়? যৌন অক্ষম বললে রতিমিলনে অক্ষম, পুরো সক্ষম নন, এমনি নর-নারীর কথা বুঝা যায়।
যৌনস্বাস্থ্য এবং যৌনক্ষমতা কারও একদিনেই নষ্ট হয় না বা নিঃশেষ হয়ে যায় না; ধীরে ধীরে নিঃশেষ হতে থাকে। বয়সের অনুপাতে যৌনক্ষমতার তারতম্য হয়। একজন ৬০ বছর বয়স্ক লোকের পক্ষে যা স্বাভাবিক অবস্থা, একজন ২০ বা ৩০ বছরের যুবকের পক্ষে তা চরম দুর্বলতা বা অক্ষমতা।
ফরাসী যৌন বিজ্ঞানীরা যৌনক্ষমতাকে দুটি সুনির্দিষ্ট ভাগে ভাগ করেছেন। তারা এক শ্রেণীকে বলেছেন ‘Je fais quand je veux’ অর্থাৎ আমার যখন ইচ্ছা তখনই আমি যৌন-মিলনে অংশগ্রহণ করতে পারি। দ্বিতীয় শ্রেণী বলেছেন ‘Je fais quand je peux’—আমি মিলনে অংশগ্রহণ করতে পারি যখন আমার মধ্যে যৌনক্ষমতা বজায় থাকে। সাধারণতঃ ১৬ থেকে ৩৮ বছর বয়সের মধ্যে, কখনও কখনও ৪০—৪৫ বছর বয়স পর্যন্তও একজন পুরুষ দিন বা রাত্রি যে কোন সময়, যখনই ইচ্ছা রতিমিলনে প্রবৃত্ত হতে পারেন। এই রতিমিলনের জন্য তিনি ইচ্ছা করলে রতিলীলার দ্বারা নিজেকে উত্তেজিত করে নিতে পারেন অথবা রতিলীলাকে বাদও দিতে পারেন। এই মিলনে তাঁর স্ত্রী সঙ্গীর ইচ্ছা বা আধা ইচ্ছাও থাকতে পারে এবং যে কোন অবস্থায়, যে কোন ভঙ্গিতে এবং যে কোন অবস্থানে এরা মিলনে প্রবৃত্তি হতে পারেন।
চল্লিশ বা পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিরা সব সময় মিলনে অংশ গ্রহণ করতে পারে না। বয়স যত বাড়তে থাকে, মিলনের বিরতির (frequency) সময় ততই দীর্ঘ হতে থাকে। এই বয়সে মিলনে প্রবৃত্ত হতে গেলে এরা রতিলীলার দ্বারা তীব্রভাবে উত্তেজনা লাভের প্রয়োজন অনুভব করেন। শুধু রতিলীলায় অভিজ্ঞ, ধৈর্যশীল এবং তীব্র যৌন আকর্ষণ সম্পন্না । মিলনসঙ্গীর এইসব দৈহিক এবং চরিত্রগুণ এই বয়সের পুরুষের যৌন মিলনের অন্যতম প্রধান সহায়ক। এমন বহু বয়স্ক আছেন, যারা অপরিচিত এবং অসহযোগী নারীর সান্নিধ্যে এলে যৌন অক্ষম হয়ে যান, কিন্তু স্ত্রীর কাছে এলে মিলনে সহজে অংশ গ্রহণ করতে পারেন।
আবার স্ত্রীর বয়স বেশী হওয়ার জন্য অথবা কোন অসুখ-বিসুখের ফলে দৈহিক স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়া এইসব স্বামীরা যৌন জীবনে অক্ষম হয়ে যান। পুরুষের বেশী বয়সে যৌন অক্ষম হয়ে যাওয়ার মুলে যেসব কারণ আছে, এই কারণটি তাঁর মধ্যে একটি অন্যতম প্রধান কারণ।
পূর্ণ রতিবিরতির জন্যও কিছু সংখ্যক পুরুষকে যৌন অক্ষম হয়ে যেতে দেখা যায়। দীর্ঘদিন ধরে মিলনাকাঙ্খাকে কঠিন সংযম এবং ব্রহ্মচর্যেরদ্বারা দমন করে রাখলে এবং কামাবেগকে দূরে রাখলে অনেকে শেষ পর্যন্ত যৌন অক্ষম হয়ে পড়ে। এমনকি যৌনমিলনে অভিজ্ঞ এবং সক্ষম ব্যক্তি যদি একাধিক্রমে ৩/৪ মাস রতিবিরতি দেন তাহলে তাঁর যৌনক্ষমতা এবং কামোত্তেজনা কমে যায়।
যৌন ক্রিয়াকলাপ দেহের সাধারণ ধর্মকে অনুসরণ করে চলে। দেহ দীর্ঘদিন যদি বিশ্রাম পায় তাহলে যৌন ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে—এবং নিয়মিত পরিচর্যা হলে ক্রমশঃ যেমন শক্তিশালী হয় তেমনিও কামাবেগের তীব্রতাও বাড়ে। অবশ্য এই ধরণের যৌনক্ষমতা উপযুক্ত চিকিৎসা দ্বারা সুস্থ করা যায়।
যৌন অক্ষমতা যেকোন পুরুষের জীবনে ঘটে এবং ঘটতে পারে। বিজ্ঞানীরা যতদুর অনুসন্ধান করেছেন, তাতে জানা গেছে যে, শতকরা ৬৮ জন ব্যাক্তি, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে, তারা এই যৌন অক্ষমতার শিকার হয়ে থাকেন। অনেকের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে আকস্মিকভাবে—আগে কোন প্রকার ইঙ্গিত না করেই। আর এই অবস্থা ঘটে তীব্র উত্তেজনার চরম মুহূর্তে, বিয়ের বা ফুলশয্যার রাত্রিতেও ঘটে অনেকের। আর কিছু সংখ্যক লোকের মধ্যে এই অবস্থা আসার আগে তাদের মধ্যে যৌনমিলনের প্রতি আগ্রহ এবং উৎসাহ কমতে থাকে, ক্লান্তি বেশি বলে মনে হয়—তারপর শেষ পর্যন্ত উত্তেজনাশক্তি রহিত হয়ে যায়।
আজ যে পুরুষ যৌনজীবনে সম্পূর্ণ সক্ষম এবং শক্তিশালী, কাল সে যে অক্ষম এবং যৌনক্ষমতাবিহীন হবে না, এমন কোন গ্যারান্টি নেই। যেসব পুরুষের আকস্মিকভাবে অক্ষমতা আসে, তারা কিন্তু এর আগে কোন প্রকার অক্ষমতাজনিত অসুবিধার কোনই আভাষ পায় না।
পুরুষের জীবনে যৌন-অক্ষমতা স্থায়ী বা অস্থায়ী যে ভাবেই আসুক এর মতো বড় অপমান এবং দুর্বলতা পুরুষের আর নেই। এই দুর্ঘটনা যাতে কারও জীবনে না ঘটে—সেই জন্য প্রত্যেক যুবককে কয়েকটি উপদেশ দিতে চাই।
এক. মনের যৌন উত্তেজনা কম করুনঃ
প্রত্যেক যুবক যৌবনবতী নারীর দিকে তাকাতে বা তাঁর সঙ্গে মিশতে ভালবাসে। এই তাকানোর মধ্যে একপ্রকার যৌনোত্তেজনা মনে জাগে যদি কোন সুন্দরী নারীর দেহের কিছুটা অংশ দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে উত্তেজনার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আধুনিককালে মেয়েরা, যুবতীরা যে ভাবে দেহের বিশেষ বিশেষ অঙ্গ অনাবৃত রেখে জামাকাপড় পরে তাতে পুরুষের যৌন উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া সিনেমায়, সিনেমার বিজ্ঞাপনে, টেলিভিশনে, স্নানের ঘাটে অথবা সমুদ্রতীরে, বিজ্ঞাপনে অর্ধ নগ্ন নারীদেহ নিয়তই পুরুষের মনে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এই উত্তেজনার ক্রমাগত আঘাত পুরুষের স্নায়ুচক্রের অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেয়। তাই, পুরুষ যখন কোন জীবন্ত নারীর নগ্নদেহের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে আসে—তখন তাঁর মধ্যে যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, সেই উত্তেজনাই তাঁর স্নায়ুদের বিকল এবং অনুভূতিহীন করে দেয়। আমি অবশ্য এমন কথা বলছি না যে, সুন্দরী নারীদের দিকে তাকানোই খারাপ।একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ উত্তেজনা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। কিন্তু পুরুষমাত্রকেই ‘চরম উত্তেজনা’ এবং ‘মাত্রামতো উত্তেজনা’ এর মাঝে সীমারেখা টানতে শিখতে হবে। মনে উত্তেজনার শিহরণ যত কম হবে পুরুষের যৌনক্ষমতা তত বেশী শক্তিশালী হবে। এমন অনেক অবিবাহিত বা সদ্যবিবাহিত যুবক আছেন—যারা যৌন জীবনের সঙ্গিনীর কাছে গেলেই লিঙ্গ থেকে কামরস ক্ষরণ হতে শুরু করে—তারপর সঙ্গিনী যখন মিলন কামনা করে তখন লিঙ্গে উত্তেজনা হয় না।
দুই. মন থেকে যৌনমিলনের কল্পনা কম করুনঃ
প্রত্যেক সুস্থ, স্বাভাবিক যুবক কল্পনায় বিশ্বের সুন্দরীকে হৃদয় দেউলে স্থাপন করে তাঁর অঙ্গে যৌনমিলনে প্রবৃত্ত হয়, তা প্রেম গ্রহণ করে নিজেকে ধন্য মনে করে। কল্পনার নিঃসঙ্গ ঘরে যুবতীকে বিবস্ত্রা করে তাঁর নগ্নদেহের রূপসুধা পা করেন না এমন যুবক কেউ আছেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। যৌনকল্পনা-বিলাস পুরুষের মনে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং দেহে, স্নায়ুচক্রে এই উত্তেজননার প্রতিফলন হয়। এখানেও আপনার সেই বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে। কতটুকু উত্তেজনা আপনার মনে জাগলে আপনার চরম উত্তেজনা হবে না এবং কতটুকু জাগলে তা সীমার মধ্যে থাকবে তা বিচার করতে হবে।
চোখে দেখে উত্তেজনা লাভের চেয়ে কল্পনায় বা স্বপ্নে যুবতী নারীকে ভোগ করা তাঁর রূপসুধা পান করার তীব্রতা অনেক গুণ বেশী হয়। কারণ, চেয়ে যাদের দেখা যায় তারা শুধু দেখাই দেয়, কিন্তু আদেশ মতো কাজ করে না—কাছে আসে না, মিলনেও অংশ গ্রহণ করে না, কল্পনার নীল আকাশে যারা স্বপ্নের ডানায় ভর দিয়ে আসে তারা যেমন শ্রেষ্ঠ সুন্দরী,তেমনি সম্পূর্ণ আজ্ঞাবহ এবং অনুগত। তাদের যেমন খুশি, যতক্ষণ খুশি কল্পনায় ভোগ করলেও বিরক্ত হয় না। আত বিপদ এইখানেই। এই কাল্পনিক সুন্দরীরা পুরুষের মনে এমন একটা ভাব সৃষ্টি করে যা বস্তব পৃথিবীর নারী করতে পারে না। অনেকে তাই পতিতার নগ্ন দেহ আলিঙ্গন করেও লিঙ্গে উতেজনার অভাবে মিলনে অংশ গ্রহণ করতে পারে না।
তিন. যদি নিবৃত্তি করার সুযোগ না থাকে, তবে উত্তেজনা এড়িয়ে চলুনঃ
কোন যুবতীকে স্পর্শ করা বা চুম্বন করা বা তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটানো প্রত্যেক পুরুষেরই স্বাভাবিক কামনা। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে পুরুষ যে যৌন-উত্তেজনা লাভ করে, তা যদি নিবৃত্তি করার সুযোগ না থাকে, তবে দেহের নিয়মতন্ত্রে অনুয়ম ঘটে। উত্তেজনার পরতে পরতে স্নায়ুচক্রেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং এই সময় এরা ঠিক্মতো কাজ করে না। রক্তের চাপ বৃদ্ধি পায়, কখনও রক্তের মধ্যে clot বেঁধে যায়। স্নায়ুচক্রের তীব্র উত্তেজনার ফলে এ্যাড্রেনালিন এবং অন্যান্য যৌন হর্মোনরা অতিমাত্রায় ক্ষরিত হয়ে হার্ট, মস্তিক এবং পেশীর উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া করে এবং নিবৃত্তি না হওয়া পর্যন্ত গভীর এবং শান্ত নিদ্রা আসে না। অথচ উত্তেজিত স্নায়ুদের শান্ত করার জন্য প্রয়োজন গভীর নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম । কিন্তু যৌন কামনার পুরো তৃপ্তি ছাড়া গভীর ঘুম আসতে পারে না। অবিবাহিত যুবকদের নারীয়ান্নিধ্য শুধু উত্তেজনাই দেয়, উত্তেজনার নিবৃত্তি দেয় না। স্নায়ুচক্রে যে অতিমাত্রায় চাপ পড়ে তাঁর ফলে যৌনাঙ্গের মধ্যে শৈথিল্য জম্মে এবং পুরুষ এই উত্তেজনার উত্তাপে পুড়তে পুড়তে অক্ষম হয়ে পড়ে।
চার. বাইরের দুঃশ্চিন্তা দাম্পত্যশয্যায় বয়ে নিয়ে যাবেন নাঃ
আপনার আর্থিক দুঃশ্চিন্তা, চাকুরী বা ব্যবসাক্ষেত্রের উদ্বিগ্ন মনোভাব, সংসারের অন্যত্র সংঘটিত কোন কলহজনিত অশান্তি, আপনার দাম্পত্যশয্যায় বয়ে নিয়ে যাবেন না। ঐ দ্বন্দ্ব কহলজাত যে উদ্বিগ্ন মনোভাব, তা পুরুষের যৌনখমতাকে স্তিমিত করে দেয়, পুরুষকে উত্তেজনাহীন করে দেয়।
মানসিক উদ্বেগ আধুনিক যন্ত্রযুগের মানুষের মনের এক সাধারণ অবস্থা। আর এই উদ্বেগ মানুষকে দিনের পর দিন মৃত্যুর দিকে, পরাজয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আজকের পৃথিবীতে এত বেশী ব্লাডপ্রেসারের আমদানীর মূলও মানসিক উদ্বেগ। মানসিক উদ্বেগ দেহের স্বাভাবিক কর্মপদ্ধতিতে বাঁধা সৃষ্টি করে। দেহের প্রত্যেক বিভাগ এই উদ্বেগের জন্য আহত হয়। পাকস্থলী এবং সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশকে ক্ষতিগ্রস্থ করে, আর যেসব স্নায়ু যৌনাঙ্গকে পরিচালনা করে তারা এর প্রভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরা সবসময় মনে মনে ভাবেন তারা এ নিয়ে এততুকু চিন্তান্বিত বা উদ্বিগ্ন নন—আসলে তারা সত্যিই কিন্তু উদ্বেগের প্রভাবে ভুগছেন—মানসিক যন্ত্রাণায় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছেন।বহু মধ্যবয়সী পুরুষ এই জাতের মানসিক উদ্বেগের জন্য যৌনজীবনে নিরুৎসাহ হয়ে পড়েন—শেষে একেবারে যৌন অক্ষম হয়ে পড়েন। আমার কথাগুলো অত্যন্ত সত্য বলে মনে হবে যদি আপনারা আপনাদের জীবনের এমনি কোন ছোটখাট ঘটনার কথা মনে করেন। ধরুন, আপনি যদি কোন রাত্রিতে শুনতে পান যে, আপনার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা বন্ধু মারা গেছে, কি আপনারা এক নিদারুণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে,সেদিন কি কি আপনার যৌনমিলনে প্রবৃত্ত হতে প্রেরণা জাগে? নিশ্চয়ই না। যেদিন আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কোন কারণে ভীষণ মনোমালিন্য হয়—সেদিন কি আপনার রতিমিলনে প্রবৃত্ত হতে ইচ্ছা হয়? নিশ্চয়ই না। অতএব মানসিক উদ্বেগকে যথাসম্ভব আপনার দাম্পত্যশয্যা থেকে দূরে রাখুন।
পাঁচ. যদি কন দিন মিলনে উৎসাহ না জাগে তবে বৃথা পরিশ্রম না করে তখনকার মতো বিশ্রাম করুনঃ
যদি কোনদিন কোন পুরুষের মানসিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দৈহিক উত্তেজনা অভাবে মিলনে প্রভৃত্ত সম্ভব না হয় তবে তখনকার মতো ঐ প্রচেষ্টা ছেড়ে দিয়ে বিশ্রাম করা উচিৎ। দেহ বিশ্রাম পেলে পরে যৌনক্ষমতা ফিরে আসে এবং সহজে মিলনে প্রবৃত্ত হওয়া যায়। এই জাতীয় ঘটনা জীবনে ঘটেনি এমন পুরুষ কেউ আছেন বলে মনে হয় না। এমন ঘটনা ঘটলে তাঁর জন্য কোন প্রকার মানসিক ভীতিকে প্রশয় না দিয়ে তখনকার মতো বিশ্রাম নেওয়া উচিৎ এবং মনকে উদ্বেগ-শূণ্য করা উচিৎ। কিন্তু যদি কেউ এই সাময়িক অক্ষমতা দেখে ভয় পেয়ে গিয়ে তাই নিয়ে অনাবশ্যক চিন্তা করতে থাকেন—তাহলে মনের মধ্যে অকারণ ভীতি ভয় পেয়ে গিয়ে বাসা বাধে এবং আত্মশক্তির উপরে আস্থা কমে যায়। মনে যদি ভয় সঞ্চার হয় এবং মানসিক ক্ষেত্রে যদি দৃঢ়তা না থাকে তাহলে যৌন-উত্তেজনা কখনই পুরুষকে সক্রিয় করে তোলে না। বরং ঐ ভয় বার বার নারীর কাছে পুরুষকে পরাজিত করে। বিশ্বের সকল শ্রেষ্ঠ যৌনবিজ্ঞানী পুরুষের যৌন-অক্ষমতার মূলে মানসিক ভীতিকে এক অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন। নারীরা প্রতি ভীতি বা নিজের প্রতি আস্থাহীনতা পুরুষের মন বা দেহ উভয়কে অক্ষম করে তোলে। এতএব মন থেকে যাবতীয় ভীতিভাব দূর করে শক্তি এবং দৃঢ়তা আনা দরকার।
ছয়. ধূমপানের মাত্রা কমিয়ে দিন
যারা ধূমপান করেন, তাঁরা বোধ হয় লক্ষ্য করেছেন, যে মানসিক অশান্তি বা উদ্বেগের সময় মানুষ খুব বেশী ধূমপান করে। ধূমপান করলে শরীরে যে নিকোটিনজাত উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তা স্নায়ুর উপরে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তাতে সাময়িক উদ্বেগ বাড়ে এবং স্নায়ুবিক দৌর্বল্য আধিক্য লাভ করে। তামাকের নিকোটিন মানুষের রক্তকোষের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। রক্তের কোষগুলি এর প্রভাবে একটার গায়ে আর একটা আটকে যায় এবং রক্ত চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি হয়। যৌন মিলনের জন্য অবশ্যই রক্ত প্রবাহের সঠিক গতি এবং চলাচল ক্রিয়া অত্যন্ত দরকারী।
সাত. কম মদ্যপান করুনঃ
মাত্রাতিরিক্ত মদ্যমান মানুষের স্নায়ু এবং অনুভূতি শক্তিকে ভোঁতা করে দেয়। মানুষ যখন মদের প্রভাবে থাকে, তখন তাঁর পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব এবং তা সে নিজের অবচেতন মনের ইচ্ছার দ্বারা করে। তখন মনের যেমন কোন শক্তি থাকে না, দেহেরও তেমনি শক্তি থাকে না। মদ মানুষের অনুভূতিশক্তি এবং যৌনক্ষমতাকে এইভাবে ধ্বংস করে দেয়। মাত্রাপরিমাণে খারাপ নয়, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে যৌনক্ষমতা অবিলম্বে বিনষ্ট হয়ে যায়।
আট. স্নায়ুর প্রক্ষেপ নিবৃত্তকারী ওষুধ এড়িয়ে চলুনঃ
আধুনিক যুগের জীবনযাত্রার অন্যতম প্রধান সমস্যা মানসিক দ্বন্দ্ব এবং উদ্বেগ। এই উদ্বেগ মানুষকে এত বিব্রত করে তোলে যে, এর নিবৃত্তির জন্য মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়। কোটি কোটি উদ্বিগ্ন মানুষের জন্য তাই চিকিৎসাবিজ্ঞান আবিস্কার করেছে হাজার হাজার Tranquilizing Drug অর্থাৎ উদ্বেগ শান্ত করার ওষুধ। সারা বিশ্বে এইসব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে বিড়ি সিগারেটের মতো। এইসব ওষুধ ব্যবহার করলে স্নায়ু এবং গ্রন্থিগুলি অনুভূতিশক্তি হারাতে থাকে। এরপর এমন এক সময় আসে যখন যৌন মিলনের প্রিয় সঙ্গীর নিকট দৈহিক সংস্পর্শও যৌনাত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে না। নিতান্ত প্রয়োজনে এক আধদিন ছাড়া এই জাতের ওষুধ ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
নয়. পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে হবেঃ
সাধারণভাবে শরীরকে সুস্থ এবং কর্মঠ রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও প্রোটিন যুক্ত খাদ্য খেতে হবে। দেহের স্নায়ুচক্রের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য ভিটামিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে ভিটামিন বি-১। কারণ, পুরুষের যৌন অক্ষমতার মূলে থাকে স্নায়ুতন্ত্রের অসাড়তা বা অসুস্থতা । প্রোটিন খাদ্য দেহকে শক্তিশালী এবং মজবুত করে রাখবে। যৌনমিলনে দৈহিক শক্তিরও বেশ একটা প্রয়োজনীয় স্থান আছে। খাদ্যের অভাবে, পুষ্টির অভাবে দেহ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। গ্রন্থিরা ঠিকমতো পুষ্টি পায় না—ফলে যৌনমিলনে যেসব জিনিস দেহের দরকার তারা নিস্তেজ থাকায় কাজ করে না বলেই যৌন অক্ষমতা দেখা দেয়।
দশ. পর্যাপ্ত মুক্ত বাতাসে ব্যায়ম করা দরকারঃ
যৌনক্ষমতা বজায় রাখার জন্য দেহের মাংসপেশীর স্বাস্থ্য যেমন দরকারী, তেমনি দরকার দেহের মধ্যে রক্তের সঠিক সঞ্চালন। আর এই দুইটির একটির জন্য দরকার নিয়মিত ব্যায়াম—অন্যটির জন্য মুক্ত বাতাস।
ব্যায়াম করলে দেহের মাংসপেশীরা উপকৃত হবে, ঠিকমতো গড়ে উঠবে এবং বৃদ্ধি পাবে। আর মুক্ত বাতাস থেকে অক্সিজেন পেলে রক্ত চলাচল সঠিক হবে। যৌন উত্তেজনা হলে দেহের পেশীগুলি যেমন স্ক্রিয় হয়, তেমন রক্ত চলাচলের গতিও বৃদ্ধি পায়।
যৌন অক্ষমের মূলে যেমন মানসিক কাজ করে, তেমনি দৈহিক কারণও আছে। যদি কেউ যৌন অক্ষমতার দরুণ যৌনজীবনে বিপর্যস্ত হতে বসেন, তবে তাঁর উচিৎ কোন ভাল চিকিৎসককে দিয়ে তাঁর যৌনাঙ্গ ও প্রষ্টেট সংক্রান্ত অঙ্গগুলি পরীক্ষা করা এবং মানসিক কারণটি খুঁজে বের করা। রতিবিরতিতে ব্রহ্মচর্য লাভ হতে পারে কিন্তু যৌন জীবন দুর্বল হয়ে পড়ে। যাদের যৌন জীবন যৌবনের যত প্রথমে শুরু হয় তারা তত বেশি দিন যৌন জীবনে সক্রিয় থাকেন। অবশ্য এর জন্য দেহ এবং মনের যত্ম নিতে হবে, পরিত্যাগ করতে হবে অসুস্থ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা।
পুরুষের যৌন অক্ষমতা নারীর সহযোগিতা পেলে অনেকাংশে দূর হয়। যৌন জীবনের সঙ্গিনী যদি পুরুষকে সাহায্যে করে তাহলে যৌন অক্ষম পুরুষও দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। যৌনমিলন যে সঙ্গীর সঙ্গেই হোক না কেন, মনকে দৃঢ় রাখতে হবে, কোন প্রকার ভীতি সংশয় বা সন্দেহ মনে দেখা দিলে যৌন অক্ষমতা অনিবার্য হয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
No comments:
Post a Comment