অসাবধানতায় গর্ভধারণ

নারীদের জন্য গর্ভধারণ জীবনে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করার মতো। কিন্তু মা হওয়ার আনন্দ অঙ্কূরেই বিনষ্ট হবে যদি অসাবধানতায় ঘটে যায় গর্ভধারণের মতো ঘটনা।

গর্ভধারণ রোধ করার জন্য অনেক ধরনের প্রতিরোধক পাওয়া যায়। সেগুলোর অকার্যকারিতার হার খুবই নগণ্য। তবে অসাবধান হলে সে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে যেতে পারে।
গর্ভধারণ করলে সে এবং তার সঙ্গীর জন্য খুব আনন্দদায়ক একটি ঘটনা। তবে, এ কথাটা সব সময় সত্য না।


জীবনযাপনবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি শিশুকে পৃথিবীতে আনার আগে তার উপযোগী একটি জীবন তৈরি করা জরুরি। সবসময় বাবা-মা একটি শিশুর জন্য প্রস্তুত থাকেন না। এরকম অপরিকল্পিত গর্ভধারণ সমস্যা সৃষ্টি করে।

পরিবার পরিকল্পনার জন্য নেওয়া ব্যবস্থাগুলোতে সমস্যা থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন অপরিকল্পিত গর্ভধারণের জন্য যতটা না প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর অক্ষমতা দায়ী থাকে তারচেয়ে অনেক বেশি থাকে ব্যবহারকারীদের অজ্ঞতা এবং অসাবধানতা।

একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যত শিশু হয় তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক শিশুই অপরিকল্পিত গর্ভ ধারনের ফলে জন্মায়। কীভাবে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ ঘটে এবং কী ধরণের সচেতনতা গ্রহণ করলে এ সমস্যা রোধ করা যায় তা জানিয়েছে চিকিৎসাবিষয়ক একটি ওয়েবসাইট—

আমেরিকার অ্যালবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অফ মেডিসিনের ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগবিদ্যা বিষয়ক প্রফেসর সিভন ডলান জানান, কোনো নারীর যদি রজোনিবৃত্তি (মেনোপজ) না হয়ে থাকে তবে তার সন্তান ধারনের সম্ভাবনা থেকেই যায়। 

ডলানের মতে, “গর্ভধারণ রোধের শতভাগ সুরক্ষিত কোনো উপায় নেই।”

অনেক সময়ই গর্ভধারণ রোধের সুরক্ষা পদ্ধতি বিফল হয়। তখন অপরিকল্পিত গর্ভধারণ ঘটতে পারে। পিল, কনডম, ইন্ট্রাউটারিন ডিভাইজেজ (IUDs) ধরনের ব্যবস্থাপনা ৮০ বা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। অন্যান্য স্থায়ী ব্যবস্থা যেমন নারীর ‘স্টেরলাজেইশন’ ও পুরুষের ক্ষেত্রে ‘ভ্যাসেকটমি’ বা বন্ধ্যকরনের মাধ্যমে সেটা বিফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও এই সম্ভাবনা শতকরা এক শতাংশেরও কম তাও সম্ভাবনা থেকেই যায়।

যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সঠিক না হয় তবে গর্ভধারণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কখনও কনডম ফেটে যেতে পারে সেক্ষেত্রে জন্ম নিয়ন্ত্রণের দ্বিতীয় ধাপ নেওয়া আবশ্যক। যা হচ্ছে জন্মনিরোধক জরুরি অবস্থায় নেওয়া বড়ি। এই পিলগুলো অরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পরদিন সকাল থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত খাওয়া যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য খাওয়া প্রাত্যহিক বড়ি খেতে ভুলে গেলেও এই জরুরি বড়ি খাওয়া যেতে পারে।
অপরিকল্পিত গর্ভধারণের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে অকার্যকর জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।

আমেরিকার উইমেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস হসপিটাল অফ রোড আইল্যান্ডের ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান চিকিৎসক মৌরিন ফিপ্স বলেন, “অনেক মহিলাই নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন না। কেউ কেউ তো মোটেই করেন না।”

এর কারণ হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেন, অনেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো পছন্দ করেন না। অনেকেরই সেগুলো পাওয়ার সাধ্য নেই। কখনও পুরুষ সঙ্গীও এটাকে অপছন্দ করতে পারেন।

ফিপ্স বলেন, “অনেক সময় এমন হয়- দম্পতি মনস্থির করে উঠতে পারেন না যে তারা আদৌ সন্তান নেবেন কিনা!”

“তারা হয়ত সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করেননি তবে তারা গর্ভধারণ এড়ানোর বিষয়েও তেমন সচেতন না।”

ফলে একসময় স্ত্রী বা নারী সঙ্গী গর্ভধারণ করে ফেলেন।

কিছু মহিলা গর্ভধারণের বিষয়ে সচেতন না। এর কারণ হতে পারে অতীতে তাদের গর্ভধারণে অসুবিধা হয়ে ছিল এবং তারা সাময়িক বন্ধ্যত্বের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। অথবা অনিয়মিত মাসিক কিংবা মেনোপজের আগের অনিয়মিত মাসিকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায়ও কেউ কী গর্ভধারণ করে ফেলেন যেটা সম্পর্কে আসলে তিনি আগে সচেতন ছিলেন না।

ডলান বলেন, “যদি মাসিক অনিয়মিতভাবেও হতে থাকে তবুও জন্ম বিরতিকরণ পদ্ধতিকে অবহেলা করা যাবে না।”

তিনি আরও জানান, একবার পুরোপুরি রজোনিবৃত্তি হয়ে গেলে অর্থাৎ একটা পুরো বছর মাসিক না হলে এটাকে ‘রজো-বন্ধ’ বা মেনোপজ বলা যায়। তখন কোনো জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ না করলেও গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকে না। তারপরেও যৌন সংক্রামণ রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হলে কোনো না কোনো সুরক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
সাধারণত জন্মনিরোধক পদ্ধতিগুলোর অক্ষমতার হার ১০ শতাংশের মতো হলেও জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে প্রায় অর্ধেক পরিকল্পনার বহির্ভূত হওয়ার আরও একটি কারণ হল, সঠিকভাবে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার না করা।

বহুল ব্যবহৃত এবং মোটামুটি সবার জন্য নিরাপদ জন্মনিরোধক পদ্ধতি হল কনডম। তবে কনডম ফেটে অঘটন হওয়ার বিষয়েও সচেতন হতে হবে। জানিয়েছে কনডম উৎপাদন ও বিক্রয় করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান।

তাদের মতে, “সঠিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করলে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।”

অন্য সব জিনিসের মতো কনডমেরও একটি মেয়াদ উত্তীর্ণের দিন থাকে এবং প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে ব্যবহার বিধি লেখা থাকে। এই দুই বিষয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার।

একবার সঙ্গমের পরে অবস্থান পরিবর্তন করে আবার মিলিত হলেও কনডম বদলে ফেলা উচিত। না হলে সেটা কার্যকারিতা হারাতে পারে।

সাধারণত সব কনডমেই লুব্রিকেন্ট বা পিচ্ছিলকারক পদার্থ লাগানো থাকে। তবে এরপরেও যদি কেউ আলাদা পিচ্ছিল কারক পদার্থ ব্যবহার করতে চান তাহলে নির্দিষ্ট কনডম কেমন পদার্থ গ্রহণ করে এই বিষয়ে আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

কনডম ফেটে যাওয়ার একটা উল্লেখযোগ্য কারণ হল এর শীর্ষে থাকা বাতাস। তাই কনডম প্যাকেট থেকে বের করার পরে আর শীর্ষের বাতাস আলতো চেপে বের করে ফেলতে হবে এরপর আস্তে আস্তে কনডম খুলে বের করতে হবে।

অনেক সময় ফয়েল প্যাকেট ছেঁড়ার সময় বা হাতের নখে বা আংটিতে লেগে কনডম ছিঁড়ে যায় বা ফুটা হয়ে যেতে পারে যেটা প্রায় কেউই লক্ষ করেন না। এই বিষয়েও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

কনডম প্যাকেট থেকে বের করার পর সেটা যদি আঠালো বা ভঙ্গুর মনে হয় এর অর্থ এটির কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এমন কনডম ব্যবহার না করার পরামর্শই দেন উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো।

#অসাবধানতায় গর্ভধারণ

No comments:

Post a Comment