ইমারজেন্সি পিল কি নিরাপদ ?

Emergency Contraceptive Pill -  ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল কতটা নিরাপদ ? কীভাবে কাজ করে এই পিল ? স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থ মুখোপাধ্যায় জানালেন একথা।

অসংরক্ষিত শারীরিক মিলন৷ জানাজানির পর তা সামলাতে প্রথমে ইমারজেন্সি কনট্রাসেপটিভ পিল খাওয়ান মা৷ কেটে যায় মাসখানেক৷ পিরিয়ড হয় না৷ লজ্জার মাথা খেয়ে এবার যেতে হয় পাড়ার ডাক্তারের কাছে৷ পরীক্ষা করে বোঝা যায় সে গর্ভবতী৷ গর্ভপাত করাতে

ডাক্তার একটি ওষুধ দেন৷ বলে দেন সোনোগ্রাফি করিয়ে রিপোর্ট দেখিয়ে তবে ওষুধ খেতে হবে৷ কিন্ত্ত সোনোগ্রাফি না করিয়েই খাওয়ানো হয় ওষুধ৷ তার দিনদুয়েকের মাথায় আরেকটি৷ এবং তার খানিকক্ষণের মধ্যেই অসহ্য পেটব্যথা, পেট ফোলা নিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় মেয়ে৷ তড়িঘড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়৷ ডাক্তার বলেন ‘শক ’-এ চলে গেছে সে৷ প্রেশার আনরেকর্ডেবল৷ কারণ? একটোপিক প্রেগন্যান্সি রাপচার৷ সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেরি হলে বাঁচানো যাবে না তাকে৷

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ দিন সাতেক যমে-মানুষে টানাটানির পর চোখ খোলে মেয়ে৷ আর দলবল নিয়ে বাবা হাজির হন ওই ডাক্তারের চেম্বারে৷ ধারণা, তাঁর ওষুধেই ঘটেছে এই অঘটন৷ আর তখনই জানা যায় এটা ছিল নেহাতই এক সমাপতন৷

সমাপতনই৷ যে ওষুধ দিয়েছিলেন ডাক্তার তাতে প্রায় সুনিশ্চিত ছিল গর্ভপাত৷ কিন্তু বিপদ এসেছে অন্য দিক দিয়ে৷ মেয়েটির গর্ভসঞ্চার হয়েছিল জরায়ুর পরিবর্তে ফ্যালোপিয়ান টিউবে৷ ওষুধ খাওয়ার আগে নিয়ম মতো সোনোগ্রাফি করলে ধরা যেত এই খবর৷ এবং সেক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার পরিবর্তে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিত্‍‍‌সা করালে এ রকম হতো না৷ এই

ওষুধ কাজ করে জরায়ুতে গর্ভসঞ্চার হলে৷ টিউবে হলে তার কিছু করার থাকে না৷ উপরন্তু টিউবাল প্রেগন্যান্সি বিপজ্জনক এক ব্যাপার৷ তড়িঘড়ি ব্যবস্থা না নিলে কী হতে পারে তা তো মেয়েটির ক্ষেত্রেই দেখা গেল৷ আর যেহেতু ওষুধ খাওয়া ও ভ্রূণের৷ চাপে টিউব ফেটে যাওয়া প্রায় একই সময় ঘটেছে, সবার ধারণা হয় এই ওষুধের জন্যই এ রকম হয়েছে৷ কিন্তু বুঝতেই পারছেন, সেটা সমাপতন ছাড়া কিছুই নয়৷

গর্ভপাতের ওষুধ কি নিরাপদ?

অবশ্যই৷ কাজেরও বটে৷ পিরিয়ড মিস করার ৭ সপ্তাহের মধ্যে খেলে ৯৫ -৯৬ শতাংশ তার সাফল্যের হার৷ বাকি ৪-৫ শতাংশের ক্ষেত্রে আংশিক গর্ভপাত হতে পারে৷ বা মোটেও না হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে ওয়াশ করে নিতে হয়৷ তবে ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধ না খাওয়াই ভালো৷ তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, সব দিক আটঘাট বেঁধে তবে ওষুধ দেবেন৷

গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ার নিয়ম

● অসুরক্ষিত সহবাসের পর পিরিয়ড মিস হলে তার ৫ -৭ দিনের মাথায় ইউরিনের প্রেগ৷ কালার টেস্ট করে দেখতে হবে গর্ভসঞ্চার হয়েছে কি না৷ রিপোর্ট পজিটিভ হলে তো হয়েই গেল, না হলে ৫-৬ দিনের মাথায় আবার পরীক্ষা করাতে হবে৷

● রিপোর্ট পজিটিভ হলে ভ্রূণের বয়স ও গর্ভসঞ্চার জরায়ুতেই হয়েছে কি না তা জানতে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো তলপেটের সোনোগ্রাফি করাতে হবে৷

● জরায়ুতে গর্ভসঞ্চার ৭-৯ সন্তাহের মধ্যে হলে প্রথমে মিফেপ্রিস্টন নামের ওষুধ খেতে হবে৷ তার ৪৮ ঘণ্টার মাথায় খেতে হবে মিসোপ্রোস্টোল৷ এরপর ২-৩ দিনের মধ্যে পিরিয়ডের মতো ব্লিডিং শুরু হয়ে যাবে৷ সঙ্গে পেটব্যথা থাকবে৷ তবে দু-একটা ব্যথার ওষুধেই তাকে আয়ত্তে রাখা যাবে৷

● এর সপ্তাহ দুয়েক পরে আরেকবার সোনোগ্রাফি করে দেখতে হবে গর্ভপাত সম্পূর্ণ হয়েছে কিনা৷ এছাড়া যদি ওষুধ খাওয়ার পর থেকে অল্প অল্প করে ব্লিডিং চলতেই থাকে, পেটে ব্যথা থাকে, তাহলেও ইনকমপ্লিট৷ অ্যাবরশনের কথা মাথায় রেখে সোনোগ্রাফি করে পরিস্থিতি যাচাই করে ওয়াশ করার ব্যবস্থা করতে হবে৷

আর ইমারজেন্সি পিল...

গর্ভ সঞ্চার হয়ে গেলে আর ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলের কোনও ভূমিকা নেই৷ এই ওষুধ শুধুমাত্র ওভিউলেশনকে পিছিয়ে গর্ভ সঞ্চার হওয়া আটকায়৷

১৫০ মি.গ্রা. লিভোনরজেস্ট্রিল ট্যাবলেট খেতে হয় অসুরক্ষিত সহবাসের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেলে সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ , ২৫ -৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খেলে ৮৫ শতাংশ , ৪৯-৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেলে তা নেমে আসে ৫৮ শতাংশে৷ ১২০ ঘণ্টার মধ্যে খেলেও কিছুটা কাজ হয়৷ তবে সাফল্যের হার যে অনেক কমে যায় তা বলাই বাহুল্য৷

ইমারজেন্সি পিলের ভালো-মন্দ

● আকস্মিক সে‌ক্সের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খেয়ে নিলে বিপদের আশঙ্কা এসে ঠেকে তলানিতে৷

● প্রচুর পরিমাণে প্রজেস্টেরন হরমোন থাকলেও কারও কারও ক্ষেত্রে সামান্য গা -বমি , মাথা ঝিমঝিম , ক্লান্তি , একটু মাথাব্যথা , পেট ফাঁপা , কখনও সখনও সামান্য ব্লিডিং ছাড়া আর কোনও সমস্যা হয় না৷

● এই পিল খেলে পরের পিরিয়ডটা ক ’দিন পিছিয়ে যেতে পারে৷ পিল খাওয়ার পর মোটামুটি সন্তাহ তিনেকের মধ্যে পিরিয়ড হয়৷ তা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই৷

● নিয়মিত খেলে, অর্থাত্‍‌ এর অপব্যবহার হলে ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, গলব্লাডারে পাথর বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের ব্যাপারে একটু সজাগ থাকা দরকার৷

ইমারজেন্সি পিল কখন খাবেন না

● কখনও হার্টঅ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে থাকলে৷

● মাইগ্রেনের সঙ্গে নিউরোলজিকাল কিছু উপসর্গ থাকলে৷

● জন্ডিস বা বড় ধরনের লিভারের অসুখ থাকলে৷

● পেরিফেরাল ভ্যাসকুলার ডিজিজের রোগী৷

● নিয়মিত গর্ভনিরোধক পদ্ধতির পরিবর্তে৷

 

 How to Use Emergency Contraceptive Pill?

1 comment:

  1. আমার বেবি হয়েছে আজকে ৪৫দিন।এখন আমি কি শুধু আজকের জন্য এই পিলটা নিতে পারবো?

    ReplyDelete