ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলঃ যা জা‌নেন না

অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ রোধে চি‌কিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল (Emergency Contraceptive Pill)। বাংলাদেশের ওষু‌ধের বাজারে এখন অনেক কোম্পানীর ইমার্জেন্সি কনট্রাসেপটিভ পিল পাওয়া যায়। যেগুলো ২ দিন থেকে ৫ দিন পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী। আর এজন্যই অর‌ক্ষিত সে‌ক্সের পর অনেকেই ইমার্জেন্সি পিলের সাহায্য নিয়ে থাকেন। ত‌বে এটা চি‌কিৎস‌কের সরণাপন্ন হ‌য়েই  সেবন কর‌তে হ‌বে। তা না হ‌লে অনাকা‌ঙ্খিত আরও বড় কোন বিপদ দেখা দি‌তে পা‌রে।

ইমারজেন্সি পিল

গর্ভ সঞ্চার হয়ে গেলে আর ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলের কোনও রকম ভূমিকা নেই৷ এই ওষুধ ওভিউলেশনকে পিছিয়ে শুধুমাত্র গর্ভ সঞ্চার হওয়া আটকায়৷

১৫০ মি.গ্রা. লিভোনরজেস্ট্রিল ট্যাবলেট খেতে হয় সে‌ক্সের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে৷ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খেলে সাফল্যের হার ৯৫ শতাংশ , ২৫ -৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খেলে ৮৫ শতাংশ , ৪৯-৭২ ঘণ্টার মধ্যে খেলে তা নেমে আসে ৫৮ শতাংশে৷ ১২০ ঘণ্টার মধ্যে খেলেও কিছুটা কাজ হয়৷ তবে সাফল্যের হার যে অনেক কমে যায় তা বলাই বাহুল্য৷

ইমারজেন্সি পিলের ভালো-মন্দ

● সে‌ক্সের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে খেলে নিলে বিপদের আশঙ্কা এসে ঠেকে তলানিতে৷

● প্রচুর পরিমাণে প্রজেস্টেরন হরমোন থাকলেও কারও কারও ক্ষেত্রে সামান্য গা -বমি , মাথা ঝিমঝিম , ক্লান্তি , একটু মাথাব্যথা , পেট ফাঁপা , কখনও সখনও সামান্য ব্লিডিং ছাড়া আর কোনও সমস্যা হয় না৷

● এই পিল খেলে পরের পিরিয়ডটা ক ’দিন পিছিয়ে যেতে পারে৷ পিল খাওয়ার পর মোটামুটি সন্তাহ তিনেকের মধ্যে পিরিয়ড হয়৷ তা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই৷

● নিয়মিত খেলে, অর্থাত্‍‌ এর অপব্যবহার হলে ভবিষ্যতে ডায়াবিটিস, গলব্লাডারে পাথর বা ব্রেস্ট ক্যান্সারের ব্যাপারে একটু সজাগ থাকা দরকার৷

ইমারজেন্সি পিল কখন খাবেন না

● কখনও হার্টঅ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে থাকলে৷

● মাইগ্রেনের সঙ্গে নিউরোলজিকাল কিছু উপসর্গ থাকলে৷

● জন্ডিস বা বড় ধরনের লিভারের অসুখ থাকলে৷

● পেরিফেরাল ভ্যাসকুলার ডিজিজের রোগী৷

● নিয়মিত গর্ভনিরোধক পদ্ধতির পরিবর্তে৷

আরও জানার বা‌কি আ‌ছে...
সমস্যা যখন হ‌বে তখন কিনবেন বলে অব‌হেলা করবেন না। যেভাবে কনডম সব সময় বাড়িতে মজুত রাখেন, তেমনই ইমার্জেন্সি পিলও মজুত রাখবেন। সময় গ‌ড়ি‌য়ে যাওয়ার পর অনেক সময়ই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, আবার অনেক সময়ই নিশ্চিত হতে না পেরে কেউ কেউ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলেন এই পিল। যা কোনক্র‌মেই ঠিক না। তাই ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল সম্প‌র্কে আরও জরুরী কিছু তথ্য জেনে নিনঃ

০১. ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল কিন্তু অ্যাবরশন করায় না। শুধু ওভিউলেশন পিছিয়ে দিয়ে প্রেগন্যান্সি রুখতে পারে। তাই গর্ভধারণের পর এই পিল খেলে কোনও লাভ হবেনা। বরং হি‌তে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

০২. অনেকেই এই সব পিলকে মর্নিং আফটার পিলও বলে থাকেন। কিন্তু পিল পরদিন সকালেই খেতে হবে এর কোনও মানে নেই। রাতে সেক্সের পরও খেতে পারেন। বরং যত তাড়াতাড়ি খাবেন তত ভাল কাজ করবে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল।

০৩. ইমার্জেন্সি পিলই কিন্তু শেষ কথা নয়। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর কপার আইইউডি। ১০ বছর পর্যন্ত প্রেগন্যান্সি রুখতে পারে।

০৪. সময়মত এই পিল খে‌তে না পার‌লে, অসম‌য়ে খাওয়ার আ‌গে ডাক্তা‌রের পরামর্শ নিন।

০৫. সাধারণত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায় ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল।

০৬. যদি নিজে থেকে পিল খেয়ে ঝুঁকি নিতে না চান, তাহলে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে নিন। এমনও অনেক পিল রয়েছে বাজারে যা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখেই দেওয়া হয়।

০৭. যদি আপনি নিয়মিত বার্থ কন্ট্রোল পিল খেতে ভুলে গিয়ে থাকেন কোনও দিন তাহলেও খেয়ে নিতে পারেন ইমার্জেন্সি পিল।

০৮. বিপদের সময় কিনবেন বলে রেখে দেবেন না। যে ভাবে কন্ডোম সব সময় বাড়িতে মজুত রাখেন, তেমনই ইমার্জেন্সি পিলও মজুত রাখবেন।

০৯. অনেকেই ভয় পান ইমার্জেন্সি পিল খেলে ওজন বাড়বে। যদিও এর সঙ্গে ওজন বাড়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

১০. ইমার্জেন্সি কন্ট্রসেপটিভ পিলের ব্যবহার কিন্তু মুড়ি মুড়কির মতো করা উচিত নয়। যথেচ্চ অসুরক্ষিত সেক্স, তারপর যখন তখন ইমার্জেন্সি পিল কিন্তু অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

১১. কোনও ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলই ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি দেয় না। তাই কিছু ক্ষেত্রে ভুল ত্রুটির জন্য পিল খাওয়ার পরও প্রেগন্যান্ট হতে পারেন।

১২. ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলের ফলে আপনার পিরিয়ড সাইকেল অনিয়মিত হতে পারে। ঘাবড়ে যাবেন না। এটা খুবই সাধারণ ব্যাপার।

১৩. ইমার্জেন্সি পিলের কিন্তু রয়েছে বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। পিল খাওয়ার পর মাথা ধরা, গা ব্যথা, বমি, ক্র্যাম্প ধরার সমস্যায় ভুগতে পারেন।

#গর্ভপাত, #ইমকন, ইমারজেন্সি পিল কি, #ব‌ড়ি, #জন্ম‌নিয়ন্ত্রণ, #উপায়, #নিয়ম

No comments:

Post a Comment