পি‌রিয়‌ডে প‌রিচ্ছন্ন থাক‌ার উপকা‌রিতা

প্রাকৃ‌তিক নিয়‌মে প্রতি চন্দ্র মাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে, তাকেই পিরিয়ড বা ঋতুচক্র (Period) বলে। একে মা‌সিকও বলা হয়। মা‌সি‌ক চলাকালীন পেটব্যথা, পিঠব্যথা ও বমি বমি ভাব হতে পারে। পিরিয়ডে ভালো মানের ন্যাপকিন ব্যবহার করা জরুরি। এ ছাড়া কোনোভাবেই একই কাপড় পরিষ্কার করে একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না। পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে যে রক্ত প্রবাহিত হয়, তার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া সহ নানা রোগ জীবানু

থাকে।

পিরিয়ডে পরিচ্ছন্নতা কেন দরকার ?

পিরিয়ড নারীদেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পিরিয়ড প্রতিমাসে নারীকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। নারীদের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো আমরা সব সময় লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করি। কিন্তু এটি মোটেও টিক নয়। কারণ আপনার অজানা থেকে হতে পারে বড় ধরনের বিপত্তি। তাই পিরিয়ড নিয়ে অহেতুক অস্বস্তি না রেখে এই নিয়ে আরও জানার এবং জানানোর চেষ্টা করুন।

পিরিয়ডের সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা খুবই জরুরি। কারণ পিরিয়ড চলাকালে শরীর থেকে শুধু দূষিত রক্তই নয়, শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ রক্তের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। ফলে এই সময়ে পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। অপরিচ্ছন্নতার কারণে হতে পারে প্রস্রাবে সংক্রমণ। আর বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

পিরিয়ডের সময় পরিচ্ছন্নতা খুবেই জরুরি। তাই আজকের আ‌লোচনায় থাকছে পিরিয়ডে পরিচ্ছন্নতার উপায়।

আসুন জেনে নেই পিরিয়ডে পরিচ্ছন্ন থাকার উপায় কি কি ?

স্যানিটারি ন্যাপকিনঃ পিরিয়ডের সময় অনেকে কাপড় ব্যবহার করেন কিন্তু এটি মোটেই ঠিক নয়। এতে প্রস্রাবে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তাই উচ্চ শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন এবং আরামদায়ক স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করুন। প্যান্ট বা বেল্ট দুই ধরনের মধ্য থেকে আপনার পছন্দেরটাই ব্যবহার করুন। ছয় ঘণ্টার বেশি কোনোভাবেই ন্যাপকিন ব্যবহার করা যাবে না। চুলকানি, ফোঁড়া, ইনফেকশন হতে পারে।

ন্যাপকিন বদলানোর সময় অসতর্কতাঃ ন্যাপকিন বদলে নতুন একটি ন্যাপকিন পরার আগে ভালোভাবে হাত ও ওই স্থানটি পরিষ্কার করে ধুয়ে ও মুছে নিন। হাত না ধুয়ে ন্যাপকিন ধরার কারণে হাতে লেগে থাকা জীবাণু প্যাডে লেগে যায় এবং সেখান থেকে জরায়ুতেও প্রবেশ করতে পারে। প্রয়োজনে জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।

বাথরুমে ন্যাপকিন রাখা যাবে নাঃ টয়লেটে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখা যাবে না। কারণ টয়লেটে থাকা নানা ধরনের জীবাণু দ্বারাও সেটি দ্রুত আক্রান্ত হয়। জীবাণুযুক্ত প্যাড ব্যবহারের ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন আপনি।

ছয় ঘণ্টার অধিক সময় ন্যাপকিন ব্যবহার নয়ঃ একটা স্যানিটারি ন্যাপকিন সাধারণত ছয় ঘণ্টার বেশি পড়ে থাকা উচিত না। এ ছাড়া পিরিয়ডের সব সময় ডিসচার্জ এর ফ্লো এক সমান থাকে না। তাই হতে পারে যে পিরিয়ডের শুরুর দিকে বেশি রক্ত যাওয়ার কারনে বারবার পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তবে শেষের দিকে ফ্লো একদম কমে গেলেও কোনো অবস্থাতেই একটা ন্যাপকিন সারা দিন ব্যবহার করবেন না।

নিয়মিত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুনঃ যোনিপথের বাইরের অংশে এবং চামড়া ভাঁজে রক্ত এবং জীবাণু আটকে যায়। তাই দিনে কয়েকবার গরম পানি দিয়ে এই জায়গাগুলো ধুয়ে ফেলুন। বাইরে থাকা অবস্থায় গরম পানি পাওয়া যাবে না, তাই সেক্ষেত্রে আগে বেবি ওয়াইপস দিয়ে আগে মুছে নিয়ে তারপর ধুয়ে ফেলুন। সাবান ব্যবহার করতে পারবেন তবে তা যেন যোনিপথের ভিতরে না যায়। প্রতিদিন গোসল করে ফেলুন। এতে করে পরিচ্ছন্ন হওয়ার পাশাপাশি পিরিয়ড চলাকালীন ক্লান্তি এবং পিঠ হাত-পা ব্যথাভাবও অনেকটা কমে যাবে।

ব্যবহৃত ন্যাপকিন সঠিকভাবে ফেলুনঃ ব্যবহৃত ন্যাপকিন ডাস্টবিনে ফেলার আগে অনেকেই বাসার বাথরুমের বিনে রেখে দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ন্যাপকিন ফেলার আগে তা পলিথিনে মুড়ে তারপর ফেলবেন। কারণ তা না হলে জীবাণু ছড়িয়ে যেতে পারে এবং ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারেন আপনিসহ বাথরুম ব্যবহারকারী যে কেউ।

একসঙ্গে একটির বেশি ন্যাপকিন ব্যবহার করবেন নাঃ পিরিয়ডের শুরুর দিকে হেভি ফ্লো থাকায় অনেকে একসঙ্গে দুটি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে চান। দুটি ন্যাপকিন এর মিলিত শোষণক্ষমতার কারণে রক্ত হয়তো দেখাই যায় না তাই দীর্ঘ সময় পরেও আপনি ভাবেন যে ন্যাপকিনগুলো আরও কিছু সময় পরে থাকা যাবে। রক্ত হয়তো চোখে দেখা যায় না, কিন্তু জীবাণু কিন্তু ঠিকই সংক্রমণ ঘটানোর জন্য তৈরি হয়ে যায়। তাই একবারে একটাই ন্যাপকিন নিন, এবং ব্যবহার শেষে (অবশ্যই ছয় ঘন্টার বেশি না) পরিবর্তন করে নিন।

স্যানিটারি ন্যাপকিন মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখঃ স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সময় অবশ্যই মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ খেয়াল করতে হবে। কারণ মেয়াদোত্তীর্ণের ফলে এটির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে এবং আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এ বিষয়টিতে অতিরিক্ত গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।

সুতরাং অবহেলা না করে মেয়েদের পিরিয়ড ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আরও বেশি যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।

No comments:

Post a Comment