যৌন মিলন প্রাকৃতিক চাহিদা বলে এর ভালো ও খারাপ উভয় দিকই রয়েছে। যৌনমিলনের সময় অনেক নারীই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন, যার অধিকাংশ সমস্যা হয় যৌনমিলনের সময়ে; অবশ্য মিলনের সময় খুব বেশি সমস্যা অনুভূত না হলেও যৌনমিলনের পরে তা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। তাই যৌনমিলনে নারীর যেসব সমস্যা হতে পারে ও সেসবের সমাধান নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১. যৌনাকাঙ্খা থাকার পরেও যোনি রসের অভাবঃ
অনেকেরই যৌন চাহিদা বেশি হওয়া সত্ত্বেও যোনী ভিজে না। পানিশূন্যতা, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ (কাউন্টার এন্টিহিস্টামিন), নার্সিং, মেনোপজের সময় হরমোন লেভেল পরিবর্তন এর উল্লেখযোগ্য কারণ।
যথেষ্ট উত্তেজিত থাকা সত্বেও কামরস বা যোনিরস না বের হলে চিকিৎসা হিসেবে পিচ্ছিলকারক পদার্থ ব্যবহার করতে হবে। তবে পানি জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করলে ভালো, কারণ কনডম এর জন্যে নিরাপদ। কিন্তু কেউ যদি তৈলাক্ত পিচ্ছিলকারক ব্যবহার করে তখন এটি কনডমের স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে দিতে পারে। রঙ দেয়া, সেন্ট দেয়া ও ফ্লেভার জাতীয় লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করা যাবে না। কারণ তা ইস্ট ইনফেকশন করে শুকনো ভাব আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
অনেকের প্রশ্ন হতে পারে, ইস্ট ইনফেকশন কি তার পুরুষ সঙ্গীর শরীরেও ইনফেকশন করতে পারে? উত্তর হবে, হ্যাঁ । এটি অনেক কমই হয়, কিন্তু হয়। একই রকম লক্ষণ যেমনঃ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানি, যৌনমিলনের পর অস্বাভাবিক নিঃসরণ হতে পারে। কোন পুরুষের যদি ডায়াবেটিস থাকে, এন্টিবায়োটিক নিতে থাকে অথবা সে তার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কোন কারণে কমে যায় তখন তার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। খৎনা করা না থাকলেও এর ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারণ এর উপরের চামড়া ভেজা ভেজা অবস্থার সৃষ্টি করে যা ইস্ট বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে।
২. মিশনারী পজিশনে যৌনমিলনে সমস্যা হওয়া (পুরুষ উপরে থাকা)
শতকরা ২০ ভাগ মহিলার জরায়ু নরমালের উল্টো দিকে থাকতে পারে অর্থাৎ পেটের দিকে না থকে শিরদাঁড়ার দিকে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে টেম্পুন বা ডায়াফ্রাম ব্যবহার করা কষ্টকর হয়। কারণ তা জরায়ুর ভেতর পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তাই নারী উপরে থেকে মিলনে কষ্ট কম হবে। আর মা হতে চাইলে যৌনমিলনের পর পেটের উপর অর্থাৎ উপুড় হয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে তা স্পার্মকে সাঁতরে জরায়ু-মুখে যেতে সাহায্য করবে।
৩. যৌন চাহিদা কমে যাওয়াঃ
মেনোপজের কাছাকাছি বয়সের মহিলাদের এটি একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। মেনোপজের আগে ইস্ট্রোজেন হরমোন লেভেল কমে যায়। লুব্রিকেশনের অভাবে ব্যথা ও ব্যথা থেকে আগ্রহ কমে যাওয়া এর প্রধান কারণ। এক্ষেত্রে চিকিৎসা হিসেবে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ইস্ট্রোজেন ক্রিম ও সাপোজিটরি আর লুব্রিকেন্ট (পিচ্ছিল কারক) কাজ দিতে পারে।
৪. যৌনমিলনের পর প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াঃ
মিলনের সময় পেনিসের চাপে ঘর্ষণ হয়ে মূত্রনালিতে ইরিটেশন হলে জ্বালাপোড়া হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ মিলন আর যৌন স্থানের শুষ্ক ভাবও এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রস্রাব নালীতে ইনফেকশন হলেও এই সমস্যা হতে পারে। যদি প্রস্রাব যৌন স্থানে লাগার পর জ্বালাপোড়া হয় তবে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মূত্রথলি খালি হওয়ার সাথে সাথে ব্যথা বাড়তে থাকলে মুত্রথলি ইনফেকশনের ব্যাপারেই সন্দেহ বেড়ে যায়।
এক্ষেত্রে চিকিৎসা হলো যৌন মিলনের পর বাথটাব ভর্তি কুসুম গরম পানিতে বসে থাকলে ব্যথা কমতে পারে। তাছাড়া পিচ্ছিলকারক ব্যবহারেও মাঝে মাঝে উপকার পাওয়া যেতে পারে। যদি এসব কিছুতেই লাভ না হয় তবে ডাক্তার দেখাতে হবে কারণ তখন কারণটা ইনফেকশনের দিকেই বেশি ইঙ্গিত করে।
বেশি পানি পান করলে পিচ্ছিলতা বাড়ে ও ইনফেকশন থেকে মুক্তি দুইটা জিনিসেই উপকার পাওয়া যায়।
৫. যৌনমিলনের পর তীব্র দুর্গন্ধ ও চুলকানিঃ
সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এমন হতে পারে। নতুন বা একাধিক মিলন সঙ্গীর কারণেও এমন হতে পারে। যৌন স্থানের ভেতরে কিছু দেয়া থাকলে (যেমন চিকিৎসার জন্যে বা রোগ নির্ণয়ে কোন কিছু ব্যবহার করা হলে) তা থেকেও হতে পারে। এর পাশাপাশি ইনফেকশনের আরও কিছু লক্ষণ থাকতে পারে যেমনঃ অস্বাভাবিক নিঃসরণ, জ্বালাপোড়া। চিকিৎসা না করা হলে ডেট এর আগেই ডেলিভারি হওয়া, স্বল্প ওজনের বাচ্চা জন্ম নিতে পারে।
এক্ষেত্রে চিকিৎসা হলো এন্টিবায়োটিক, যেমনঃ মেট্রোনিডাজল বা ক্লিন্ডামাইসিন ব্যবহারে লাভ হতে পারে। যাদের বাচ্চার জন্মকালীন ওজন কম বা যাদের ডেট এর পূর্বেই সন্তান জন্ম নিয়েছে তাদের স্ক্রিনিং করাতে হবে।
No comments:
Post a Comment