ঋতুস্রাবের সময় পেটে ব্যথা : চিকিৎসা কী?

ঋতুস্রাবের সময় পেটে ব্যথা মেয়েদের খুব প্রচলিত একটি সমস্যা। সাধারণত ঋতুস্রাবের সময় তলপেটে ব্যথা অনুভব হয় না, এমন নারীর সংখ্যা খুবই কম। সাধারণত অল্প বয়সেই এই সমস্যা বেশি হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যথাটা সহনীয় মাত্রাতেই থাকে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যথা তীব্র হয়। যদি ব্যথা সহনীয় পর্যায়ে না থাকে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যঘাত ঘটায় তাহলে সেটাকে সমস্যা হিসেবেই গণ্য করতে হবে। ঋতুস্রাবের ব্যথার এই সমস্যাকে বলে ডিজম্যানোরিয়া।
ডিজম্যানোরিয়া দুই রকম হতে পারে। প্রাইমারি ডিজম্যানোরিয়া, সেকেন্ডারি ডিজম্যানোরিয়া। নিচে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হলো।

প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়া
যখন ডিজমেনোরিয়ার অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না তখন সেটাকে বলে প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়া। সাধারণত অল্প বয়সী মেয়েদের, বিশেষ করে ১৬ থেকে ২৪ বছরের মেয়েদের এই সমস্যা বেশি হয়। তলপেটের পেশিগুলোর অতিসংবেদনশীলতা, কিছু হরমোনের প্রভাব, মানসিক চাপ, হতাশা, বিষণ্ণতা, কম ওজন ইত্যাদিকে কারণ হিসেবে ধরা হয়। তবে সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যথা এমনিতেই সেরে যায়। অনেক সময় বিয়ের পর সন্তান নিলে প্রথম প্রসবের পর এই ব্যথা নিজে নিজে সেরে যায়।

সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়া
যখন বিশেষ কোনো কারণে ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা হয় তখন তাকে সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়া বলে। জরায়ুর ইনফেকশন, পলিপ , টিউমার, জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি কারণে ঋতুস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যথার নেপথ্যের কারণটির চিকিৎসা করলে ব্যথা আপনা থেকেই সেরে যায়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা
প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়ার ক্ষেত্রে আসলে তেমন কোনো পরীক্ষা নেই। সেক্ন্ডোরির ক্ষেত্রে কারণ খুঁজতে গিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে। এর মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম হলো খুবই কাজের একটি পরীক্ষা। জরায়ুতে টিউমার বা পলিপ থাকলে বা জন্মগত কোনো ত্রুটি থাকলে তা আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে সহজেই ধরা পড়ে। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান করারও দরকার হয়। এ ছাড়া বিশেষ কিছু হরমোনের পরীক্ষা করে দেখা হয়। রক্তের রুটিন পরীক্ষা, প্রস্রাবের পরীক্ষা, কিছু টিউমার মার্কার এর কারণ খুঁজতে সাহায্য করে।

চিকিৎসা
কাউন্সেলিং হলো প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়ার প্রধান চিকিৎসা। ঋতুস্রাব সম্পর্কে মেয়েদের বোঝাতে হবে।
ব্যথার কারণ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। খুব খারাপ কিছু যে হয়নি- এই বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে।
সেকেন্ডারি ডিজমেনোরিয়ার ক্ষেত্রে ব্যথার কারণটি খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। ইনফেকশন থাকলে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এছাড়া ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথার মাত্রা অনুযায়ী প্যারাসিটামল, মেফেনামিক এসিড, ন্যাপ্রোক্সেন সোডিয়াম, টাইমোনিয়াম মিথাইলসালফেট প্রভৃতি ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া যেতে পারে।
ঋতুস্রাব শুরুর আনুমানিক দশদিন আগে থেকে শুরুর ১০ দিন পর্যন্ত ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেলে ব্যথা কিছুটা কম হয় বলে কোনো কোনো গবেষণায় দেখা গেছে। তবে এগুলো খুব প্রতিষ্ঠিত কোনো তথ্য নয়।

ঋতুস্রাবের ব্যথা নিরাময়ের কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা
গরম স্যাঁক : বোতলে বা হটওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ভরে বা কাপড় গরম করে তলপেটে স্যাঁক দিলে ব্যথা কমে। এটা করতে হবে প্রতি সপ্তাহে একটানা তিন-চারদিন পর্যন্ত, প্রতিদিন ২০-২৫ মিনিট করে।
সিজ বাথ : কোমর পর্যন্ত কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে বসে থাকা। তিন-চার মিনিট কুসুম গরম পানিতে বসে দুই মিনিটের বিরতি। এভাবে ২০-২৫ মিনিট করে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ।
কেজেল ব্যায়াম : এটা একটা বিশেষ ধরনের ব্যায়াম। মূত্রনালি ও মল দ্বারের চারপাশের পেশি এবং তলপেটের ও শ্রোণি চক্রের পেশিগুলোকে শক্তভাবে সংকুচিত করে তিন সেকেন্ড ধরে রেখে আস্তে আস্তে রিল্যাক্স করা। এভাবে সারাদিনে ১০-১৫ বার। এটাকে বলে কেজেল ব্যায়াম। কেজেল ব্যায়াম ডিজমেনোরিয়ার ব্যথা কমাতে খুব সাহায্য করে।
ঋতুস্রাব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। বয়ঃসন্ধির আগেই মেয়েদের এর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এই সময়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার উপায়, সমস্যা হলে তার সমাধানের উপায় ইত্যাদি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে হবে। পরিবারের বয়োজ্যাষ্ঠ বা স্কুলের শিক্ষিকারা কথা বললে অল্প বয়সী মেয়েদের এসব নিয়ে ভীতি ও অস্বস্তি কেটে যাবে।

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল 
আবাসিক চিকিৎসক, বিএসএমএমইউ।

No comments:

Post a Comment