সকল মানুষেরই যৌন চাহিদা রয়েছে। তাই বলে সব মানুষই যে যৌনতায় প্রলুব্ধ হন, তা কিন্তু নয়। এ ক্ষেত্রে অনেকের নানা কারণে অনীহাও রয়েছে। যেমন সঙ্গী বা সঙ্গিনী থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে একজনের যৌনতায় অনীহা। এই হার ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইনডিপেনডেন্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল সার্ভে অব সেক্সুয়াল অ্যাটিচুডস অ্যান্ড লাইফস্টাইলসের গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌনতায় যাঁদের আগ্রহ বেশি, তাঁদের জীবনের প্রত্যাশা, জীবনমান ও আত্মসম্মানবোধ অনেক বেশি হয়। অন্যদিকে যৌনতায় অনাগ্রহের সঙ্গে বিষণ্নতা, পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ও মানসিক চাপকে দায়ী করেছেন গবেষকেরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন যৌন বিশেষজ্ঞ আলফ্রেড কিনসে ৭০ বছর আগে এ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম ব্যক্তিদের মধ্যে ১৯ শতাংশেরই যৌনতায় বিশেষ আগ্রহ নেই।
ন্যাশনাল সার্ভে অব সেক্সুয়াল অ্যাটিচুডস অ্যান্ড লাইফস্টাইলসের ২০১৩ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মধ্যে যৌনতায় অনাগ্রহ বেশি। মানুষের যৌনতার আগ্রহ নিয়ে সাধারণভাবে যে ধারণা করা হয়, তারা ওই ধারণার অনেক নিচে।
ন্যাশনাল সার্ভে অব সেক্সুয়াল অ্যাটিচুডস অ্যান্ড লাইফস্টাইলসের ২০১৫ সালের আরেক গবেষণায় বলা হয়, গত কয়েক মাসে প্রাপ্তবয়স্ক ৫১ শতাংশ মানুষ যৌনতায় একদম অংশ নেননি। দ্রুত এ ক্ষেত্রে তাঁদের আগ্রহ কমে গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌনতায় মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো স্বাস্থ্যগত সমস্যা। শারীরিক সমস্যার কারণেই সঙ্গী বা সঙ্গিনী থাকলেও অধিকাংশ মানুষ যৌনতা থেকে দূরে থাকতে চান। এ ছাড়া হৃদ্রোগ, শরীরে জটিল ব্যথা, বিপাক-সংক্রান্ত সমস্যা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, যৌনতার ক্ষেত্রে নির্যাতন ও স্বল্প ঘুমের কারণেই যৌনতায় অনীহা বেড়ে চলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যাঁদের হৃদ্রোগ আছে, তাঁরা ভাবেন যৌনতার সময় হুট করে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের ভয়ে ভোগেন তাঁরা। আর এ কারণেই যৌনতা থেকে দূরে থাকাই তাঁরা শ্রেয় মনে করেন। এ ছাড়া যাঁরা বিষণ্নতা রোধের নিয়মিত ওষুধ খান, ওই ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় তাঁদের যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়।
নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে যৌনতায় অনীহা হারে ভিন্নতা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের চেয়ে নারীদের যৌনতায় অনাগ্রহ সবচেয়ে বেশি। যৌনতা এড়িয়ে চলা নারীদের হার ৪০ শতাংশেরও বেশি। আর এই বিভাজন তাঁদের কৈশোর বয়স থেকেই শুরু হয়েছে।
যৌনতায় অনীহার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের আলাদা হারের প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌনতার সময় ব্যথা পাওয়া নারীদের সাধারণ সমস্যা। এই ব্যথা পাওয়ার ভয় থেকেই অনেক নারী যৌনতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের ভয়, কোনো কারণে যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া ও কৈশোরে ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতনের স্মৃতিও নারীদের যৌন অনীহার কারণ। আবার ভ্রূণের ক্ষতির আশঙ্কায় অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারী যৌনতা এড়িয়ে চলেন।
আর পুরুষদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, একদম নিজস্ব কারণেই পুরুষদের যৌনতায় আগ্রহ কমছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে যৌন অক্ষমতা, স্বাস্থ্যগত জটিল সমস্যা ও সুযোগের অভাব। একাকিত্বে ভোগা নারী ও পুরুষেরা একসময় যৌন হতাশায় ভোগেন। আর যাঁদের সঙ্গী বা সঙ্গিনী চলে যান, তাঁরা একসময় পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হন। যার পরবর্তী সময়ে নেতিবাচক প্রভাব যৌন আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দেয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌনতায় আগ্রহ না থাকার পেছনে বয়স একটা কারণ। অনেক বয়স্ক ব্যক্তির ধারণা, তাঁরা এতটাই বুড়ো হয়ে গেছেন যে তাঁদের জন্য আর যৌনতা নয়। তবে সবার ক্ষেত্রে এই ধারণা এক না-ও হতে পারে।
গবেষকেরা বলছেন, যদি আপনি এমনিতেই সুখী হয়ে থাকেন, তাহলে যৌনতায় অনাগ্রহ বড় কোনো সমস্যা নয়। তবে গত বছর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে যৌনজীবন নিয়ে মাত্র ৬৪ শতাংশ মানুষ সুখী। এই সমাজে মানুষ যৌনতায় অনাগ্রহ নিয়ে তেমন একটা কথা বলেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এ ক্ষেত্রে কথা বলতেই হবে। আপনি যদি আপনার স্বাস্থ্য ও যৌনজীবন নিয়ে সচেতন হতে চান, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করুন।’
No comments:
Post a Comment