নর-নারীর যৌনতায় শৃঙ্গার কেন জরুরী

যৌনমিলনে পুরুষের সা‌থে যাতে নারীও প‌রিপূর্ণ সঙ্গম তৃপ্তি ও সুখ উপভোগ করতে পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখা পুরুষের একান্ত কর্তব্য। তেম‌নি নারী‌দেরও উ‌চিত তার সঙ্গীর সা‌থে যৌনক‌র্মে সর্বাত্বক সহায়তা করা। নারীমন যেমন পুরুষ‌দের থে‌কে মিল‌নের পাশাপা‌শি যৌন‌ক্রিয়া বা শৃঙ্গার আশা ক‌রে; তেম‌নি পুরুষরাও চায় তার নারী সঙ্গী‌নির মন মাতা‌নো শৃঙ্গার। 

যৌন মিলন বা সে‌ক্সের পূ‌র্বেই ছে‌লে‌দের উ‌চিত মে‌য়ে‌দের শরী‌রে বি‌ভিন্নভা‌বে প‌রিপূর্ণ যৌন উ‌ত্তেজনা জাগ্রত করা। এর ফ‌লে মিল‌ন এবং কা‌জেক‌র্মে আস‌বে পূর্ণ তৃ‌প্তি ও প্রশা‌ন্তি। নারীর দে‌হে সহজে যৌন উত্তেজনা আসেনা। এর কারণ, নারীর যৌন অঙ্গ ছাড়াও কামকেন্দ্র শরীরের নানা অঞ্চলে বিস্তৃত। যেমন- ঠোঁট, গাল, মুখ, স্তন, স্তনের বোঁটা, নিতম্ব, ভগাঙ্কুর ও
যোনি।

নারীর ভগাঙ্কুর নারীর শ্রেষ্ঠতম যৌন কেন্দ্র এবং এর ক্রিয়া ব্যতিত কোনো শৃঙ্গারই সম্পূর্ণ হতে পারেনা- এমন মত প্রকাশ করেছেন যৌন বিজ্ঞানীরা। ডাঃ ব্রায়ানরবিনসন নামে যৌন শাস্ত্রবিদ বলেন, ‘নারীর ভগাঙ্কুর নারী দেহরূপী প্রাসাদের সদর দরোজার কলিং বেল’। বৈদ্যুতিক কলিং বেলে আঘাত করলে যেমন সমস্ত প্রাসাদে তার শব্দ ধ্বনিত হয় এবং প্রাসাদবাসী সংকুচিত হয়। তেমনি নারীর ভগাঙ্কুরে হালকা আঘাত করলে বা স্পর্শ করলে নারী দেহের সমস্ত কাম-চৈতন্য মাথা চাড়া দিয়ে জেগে ওঠে। সহবাসকালে নারীর এসব জায়গায় পুরুষের হাত বা মুখের স্পর্শ না লাগলে নারীর কামেচ্ছা যেন তৎক্ষণাৎ জেগে ওঠেনা। তাই নারী চায় পুরুষ তাকে কাছে টেনে নিয়ে চুম্বন, আলিঙ্গন, স্তন মর্দন, দংশন ও গাত্র লেহনে ভরিয়ে তুলুক। যৌন মিলনকালে পুরুষ লিঙ্গ স্ত্রীর যৌন অঙ্গসমূহ দখল করলেও পুরুষের হাত চায় স্তন মর্দন করতে, আর মুখ চায় ঠোঁট চুম্বন করতে। কাজেই,যৌনাঙ্গের মতই স্ত্রীর স্তন, বুক, মুখ, গাল, ঠোঁট যৌনমিলনকালে পুরুষের প্রিয় অঞ্চল। স্বামীর শৃঙ্গারে উত্তেজিত ও উৎক্ষিপ্ত হয়ে রতিক্রিয়ায় স্ত্রী যেমন অধিক আনন্দ পায়, ঠিক সেরূপভাবে স্ত্রীর শৃঙ্গারে উত্তেজিত উৎক্ষিপ্ত হয়ে মিলনকাজে পুরুষও আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ করে। স্ত্রীলোকের ন্যায় পুরুষেরও কতকগুলো যৌন প্রদেশ আছে। পুরুষ কর্তৃক স্ত্রীলোক তার যৌন প্রদেশসমূহে যেমন শৃঙ্গারের আবশ্যক বোধ করে, স্বামীও অনুরূপভাবে স্ত্রীর দ্বারা তার যৌন প্রদেশসমূহে শৃঙ্গার প্রত্যাশা করে। একথা যে স্ত্রীলোক ভুলে যায়, সেখানে দাম্পত্য জীবন হয় অসুখী।

যৌনক্রিয়ায় যদিও পুরুষ কর্তা এবং নারী কর্ম, তবুও যৌনক্রিয়ায় অচল হয়ে পড়ে থাকা ছাড়া নারীর আর কোনো কর্তব্য নেই, একথা কখনো মনে করা উচিত নয়। আমাদের দেশের অনেক মেয়ের এরূপ ধারনা আছে যে, রতিক্রিয়ায় তারা যতই অনিচ্ছা প্রকাশ করবে,স্বামীর কাছে ততই মূল্য পাবে। কিন্তু এ ধারণা একটুও ঠিক নয়। যৌনক্রিয়ায় আগ্রহী হওয়ার দায়িত্ব শুধু স্বামীর! একথা কখনোই মনে করা উচিত নয়। স্বামীকে যৌন আনন্দ দান করার জন্য স্ত্রীকে স্বামীর নিকট লজ্জা করলে চলবেনা। লজ্জা করলে চলবেনা। স্বামীর সঙ্গে নানা প্রকার খোশ গল্প করে, ঠাট্টা করে, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, দে‌হের বি‌ভিন্ন স্থা‌নে আদর ও চুম্ব‌নে তাকে যৌন কার্যে উৎসাহিত করতে হবে, উত্তেজিত করতে হবে।
এটা মনে রাখতে হবে যে, স্বামীর শৃঙ্গারে স্ত্রীর যেমন আনন্দ ও তৃপ্তি লাগে, তেমনি স্ত্রীর শৃঙ্গারেও স্বামীর সেরূপ আনন্দ ও তৃপ্তি লাগে। 

ডাঃ নিস বলেন, স্বামী তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করলে তুমি যেমন তৃপ্তিবোধ কর, তুমিও স্বামীকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন কর সেও তেমন সুখ লাভ করবে। দাম্পত্য জীবন সুখের ও আনন্দ দায়ক করতে হলে স্ত্রীকে আর একটি কথা মনে রাখতে হবে, সেটি হলো পুরুষ স্বভাবতই বহুকামী। বিবাহিত জীবনের একঘেয়েমী সে সহ্য করতে পারেনা। বিবাহিত জীবনের একঘেয়েমী দূর করার জন্য নারীকে চেষ্টা করা প্রয়োজন।
ডাঃ মেরী স্টোপস বলেন, নারীর রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রক্রিয়া দ্বারা পুরুষকে এক পত্নীক জীবনে বিচিত্র স্বাদের আস্বাদ দিতে পারে।

নারী-পুরুষের বিবাহিত জীবনের কর্তব্য হলো, যৌনক্রিয়া বা সহবাস বিষয়ক বিভিন্ন ক্রিয়া-কলাপগুলো জেনে নেয়া। পুরুষের চেয়ে নারীর যৌন প্রবণতা বা যৌনতা বেশি। কিন্তু নারীর মধ্যে কামপ্রবণতা বেশি থাকা সত্ত্বেও সেই কামনার আগুনে জ্বলে ধীরে ধীরে চুপে চুপে। পুরুষের মত দাউ দাউ করে খড়ের আগুনের ন্যায় স্ত্রীলোকের কামেচ্ছা জাগ্রত হয়না। আবার অত সহজে তা নিবৃত্তও হয়না। সুতরাং পুরুষ যদি তার লিঙ্গোদ্রেক হওয়া মাত্রই হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে সঙ্গমে রত হয়, তবে সে নিজে চরমপুলক লাভ করলেও স্ত্রী থেকে যাবে অতৃপ্তা। আর এই অনিচ্ছাকৃত যৌন সংযোগের ফলে স্ত্রীর যোনি ব্যথিত হবে, উপরন্তু তার মনও হবে বিরক্ত। তাই এসব ক্ষেত্রে পুরুষকে বিবেচনা সহকারে এগুতে হবে। তবে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, এটা শুধু যান্ত্রিক সুখ-ভোগ নয়, প্রেমিক-প্রেমিকার মিলন।
স্বামী যেমন স্ত্রীকে ভালোবাসেন, তেমনি স্ত্রীও স্বামীকে ভালোবাসেন। কিন্তু পুরুষ সঙ্কোচহীন। তাই তার ভালোবাসা, উগ্র-উলঙ্গ। আর নারী লজ্জাশীলা, তাই তার ভালোবাসা থাকে অন্তরের অন্তঃস্থলে লুকিয়ে। এক্ষেত্রে পুরুষের কর্তব্য হবে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকেও অনুরূপ ভালোবাসা জ্ঞাপনের সুযোগ দেয়া। আদর- সোহাগ প্রভৃতির দ্বারা মেয়েদের বিশ্বাস ও অনুরাগ উৎপাদন করতে হয়। স্ত্রীকে যৌন কলা বা আর্ট শেখাতে হয়। প্রথমে স্ত্রীকে প্রেম-সোহাগ রসে নিষিক্ত করে তার অন্তরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে হবে। যখন বোঝা যাবে যে, স্ত্রী তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছেন, তখন স্ত্রীও তার প্রতি নিজের অনুরাগ প্রকাশ করবে। মাত্র তখনই তার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে। কিন্তু সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, স্ত্রী যেন যৌন ক্রিয়ার সময় কোনোক্রমেই ভীত বা উদ্বিগ্ন হয়ে না পড়ে। 

যৌন সংযোগ স্থাপনের প্রথম পদক্ষেপই হলো শৃঙ্গার। ইংরেজীতে একে বলা হয় Love Play । শৃঙ্গার দ্বারা স্ত্রীর সুপ্ত, ঘুমন্ত যৌনতাকে জাগ্রত করতে হয়। অতএব সঙ্গমের পূর্বে নারীকে শৃঙ্গার করা প্রত্যেক পুরুষেরই কর্তব্য। যৌনমিলন যেমন প্রত্যেক জীবের শারীরিক ও মানসিক তাগিদ, ঐরূপ শৃঙ্গারও জীবের একটা স্বাভাবিক তাগিদ। যৌনতাকে উৎকর্ষতায় ও সুখে-তৃপ্তিতে ভরিয়ে তুলতে হলে শৃঙ্গার করুন, শৃঙ্গারে শৃঙ্গারে চূড়ান্ত যৌনমিলনের দিকে এগিয়ে যান। দেখবেন আপনি সুখী হবেন, আপনার স্ত্রীওসুখী হবেন।

অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
এমবিবিএস এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি

No comments:

Post a Comment