বিশেষ একটি ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন গবেষকরা। আর এ পরীক্ষায় তাঁরা সফল হয়েছেন। ফলে এখন পুরুষের জন্য কার্যকর নন-হরমোনাল জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি এবার চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
শুধু খাওয়ার ওষুধই নয়, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য পুরষের দেহে প্রয়োগের কার্যকর ইঞ্জেকশনও তৈরি করেছেন গবেষকরা। এ ধরনের একটি ইঞ্জেকশনের নাম ভ্যাসেলজেল। এটি যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ অনুমোদন পেয়েছে এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে এটি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাজারে ছাড়া হবে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা দাবি করেছেন, পুরুষের মুখে খাওয়ার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি তৈরি একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন তাঁরা। ইঁদুরের ওপর গবেষণায় সফলতার পর এখন পুরুষের ওপর এ বড়ির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে আগ্রহী গবেষকরা। যুক্তরাষ্ট্রের ডানা-ফারবার ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও বেলর কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা জানান, নারীর ক্ষেত্রে কয়েক দশক ধরেই জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা হিসেবে পিল বা বড়ির প্রচলন রয়েছে। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে কার্যকর তেমন কোনো বড়ি তৈরি করা এখনো সম্ভব হয়নি। 'জেকিউ১' নামের একটি ড্রাগ তাঁদের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে। এ ড্রাগ দিয়ে তাঁরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছেন। জেকিউ১ ব্যবহারে ইঁদুরের স্বাভাবিক যৌনজীবনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গবেষকরা আশা করছেন, এ ড্রাগ মানুষের ক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে পারবেন তাঁরা। তবে নিরাপদ ও কার্যকর করতে এ ড্রাগ নিয়ে আরো পরীক্ষা চালাবেন তাঁরা।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যালান পেইসি জানিয়েছেন, পুরুষের জন্য এ ধরনের বড়ি প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ হিসেবে ইনজেকশন বা ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরিতে বাধা দিয়ে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়া কমানোর জন্য চেষ্টা করা হয়েছে।
পুরুষের জন্য অন্য একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি আবিষ্কার করেছেন ইসরায়েলের বিজ্ঞানীরা। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন খাওয়ার এই বড়ি শুক্রাণুকে জরায়ুতে প্রবেশের আগেই অকার্যকর করে দেবে। ফলে নারীর অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের আশঙ্কা থাকবে না। বড়ির উদ্ভাবনকারী গবেষকরা জানান, প্রতি তিন মাসে মাত্র একবার বড়ি খেলেই চলবে। আগামী তিন বছরের মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাবে এই বড়ি। জন্মবিরতিকরণ ইনজেকশনের মতো এই বড়িতে পুরুষদের হরমোন টেস্টোস্টেরন ও মেয়েদের হরমোন প্রজেস্টেরনের সমন্বয় ঘটানো হয়নি। এই বড়ি শরীরে ঢুকে শুক্রাণু থেকে গর্ভসঞ্চারকারী অতিপ্রয়োজনীয় প্রোটিন অংশ সরিয়ে ফেলবে। ফলে শুক্রাণু জরায়ুতে ঢুকলেও ডিম্বাণু নিষিক্ত করতে পারবে না। গবেষকদের বিশ্বাস, এতে নারীর গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ বন্ধ রাখতে সক্ষম হবে এই বড়ি। বর্তমানে পুরুষের জন্য পরীক্ষাধীন হরমোন ইনজেকশনের ব্যবহারে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, বিষণ্ণতা ও যৌনাকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রেও গর্ভনিরোধক বড়ির প্রধান সমস্যা এটি।
এ বিষয়ে বার-ইলান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেইম ব্রেইটবার্ট বলেন, 'পুরুষরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না। এ কারণেই অনেকেই হয়তো বড়ি খেতে চাইবেন না। কিন্তু আমাদের উদ্ভাবিত বড়ির ক্ষেত্রে সে ভয় নেই।' নিয়মিত প্রতিদিন পিল খাওয়ারও ঝক্কি নেই। নতুন পিলটি প্রতি মাসে বা প্রতি তিন মাসে একটি করে খেলেই চলবে।
এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার গবেষকরাও পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি উদ্ভাবনের দাবি করেছেন। বড়িটির নাম জেন্ডারুসা। গবেষকরা জানিয়েছেন, এটি দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। এ পদ্ধতিটি কাজ করে শুক্রাণুর ওপর। মূলত শুক্রাণুকে ডিম্বাণু নিষিক্ত করায় বাধা দেয় এ ওষুধটি।
এতদিন ধরে পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য একটি পদ্ধতিই কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার নাম কনডম। এটি ব্যবহারের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে পুরুষেরা অনেকেই এটি ব্যবহারে ভুল করেন। আর এ কারণে নারীর গর্ভধারণের আশঙ্কা থেকে যায়। নতুন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িগুলো আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাজারে চলে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এগুলো বাজারে এলে সে ঝুঁকি কমে যাবে।
No comments:
Post a Comment