জরায়ু ক্যান্সারের অন্যতম কারণ বাল্যবিয়ে

বিশ্বে জরায়ু মুখে ক্যান্সারে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা, বাড়ছে মৃত্যুর হার । বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের শতকরা ৩০ জনই জরায়ু মুখে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। গড়ে ১৮ জন নারী মারা যায় এই ঘাতক ক্যান্সারে।

যে কোনো বয়সেই নারীদের জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকলেও ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। তবে ৫০ বছর বয়স্ক কিংবা এর থেকে বেশি বয়সের নারীরাও জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন।

তবে জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত  হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তবে বাল্যবিয়েকে অন্যতম কারণ মনে করছেন ক্যান্সারবিশেষজ্ঞরা।

জরায়ু ক্যান্সার সম্পর্কে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন (ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগ)। জরায়ু মুখে ক্যান্সারের বিষয়ে আলাপকালে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন তিনি।

হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, আমাদের দেশের বেশির ভাগ নারীরা তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দিলে অনেক নারীই এর লক্ষণ বুঝতে পারেন না। আবার ভিন্ন লক্ষণ দেখা দিলেও অনেক সময় গুরুত্ব দেন না। কিন্তু প্রথম কথা হলো নারীদের স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। কোনো সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

আসুন জেনে নেই জরায়ু মুখে ক্যান্সার কী এবং এর অন্যতম কারণ কী?

জরায়ু মুখ ক্যান্সার কী :
অবিন্যস্ত ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের ফলে অস্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোষকলার পি-কে টিউমার বলে।
টিউমার দু’ধরনের বিনাইন বা শিষ্ট টিউমার ও ম্যালিগন্যান্ট বা দুষ্ট টিউমার। এ ম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যান্সার। জরায়ু মুখের দুষ্ট টিউমারটিকে বলে জরায়ু মুখের ক্যান্সার। জরায়ু ক্যান্সারকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলা হয়।

১. বাল্যবিয়ে :

বাল্যবিয়ে জরায়ু মুখে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হলে মেয়েদের নানা ধরনের যৌন সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে জরায়ু মুখ ক্যান্সার।

২. ঘন ঘন সন্তান প্রসব :
ঘন ঘন সন্তান হওয়া জরায়ু ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। ঘন ঘন সন্তান নেয়া মায়ের শরীরের জন্য ভালো না। এত স্বাস্থ্যহানি হয় এবং মায়েরা জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

৩. ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা :

ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার কারণে জরায়ু ক্যান্সার হতে পারে। বিশেষ করে মেয়েদের মাসিক চলাকালীন পরিষ্কার কাপড় বা ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে। এই সময় অতি সতর্ক থাকতে হবে। পরিচ্ছন্ন না থাকলে জীবাণু ঢুকে ক্যান্সার হতে পারে।

৪. অপুষ্টি

নারীদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে  জরায়ু ক্যান্সার হয়ে থাকে। তাই মাসিক চলাকালীন বা অন্য সময়গুলোতে পুষ্টিসমৃদ্ধ  খাবার যেমন- ডিম, দুধ, কচুশাক, ফলমূল ইত্যাদি খেতে হবে।

৫. জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি :

জরায়ু ক্যান্সারের আরেকটি কারণ হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির কারণে অনেক সময় জরায়ু ক্যান্সার হয়ে থাকে। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

৬. প্যাপিলোমা ভাইরাস :
নীরব ঘাতক হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) জরায়ু মুখে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এতে  জরায়ুর মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এর কোনো লক্ষণ নেই। নির্দিষ্ট চিকিৎসা ও পরীক্ষার মাধ্যমে তা শনাক্ত করা হয়। তবে এ ক্যান্সারেও  রক্তক্ষরণ হতে পারে।

No comments:

Post a Comment