হায়েজ-নেফাছ কালীন সহবাস


মহান রাব্বুল আল-আমিন নারী-পুরুষের মাঝে পারস্পরিক মিলনের মাধ্যমে আত্মতৃপ্তি ও আত্ম প্রশান্তি লাভের যে কামনা ও চাহিদা অংকুরিত করে রেখেছেন তা মিটানোর জন্য ইসলাম মানুষকে বিধি-নিষেধের বাইরে; প্রবৃত্তি ও অবাধ যৌনাচারের হাতে ছেড়ে দেইনিবরং এই চাহিদা পূরণের জন্য ইসলাম মানুষকে বাতলে দিয়েছে বিবাহেরমত এক সুনির্দিষ্ট পন্থা। এ কারণেই বিবাহ আল্লাহর নবীর এক গুরত্বপূর্ণ সুন্নত এবং হাদীসের ভাষ্য অনুসারে ঈমানের নিসাফবা অর্ধেক। কেননা বিবাহের মাধ্যমে একদিকে যেমন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে ব্যভিচার ও শরীয়ত বর্জিত কার্যকলাপ থেকে, অপরদিকে বিয়ে করলে সুস্থ থাকে মানুষের দেহ ও আত্মা। সুখ-শান্তি ও তৃপ্তিতে ভরে যায় জীবন। সৃষ্টি হয় দুটি অপরিচিত মানুষের ভেতর পারস্পরিক প্রেম, ভালোবাসা ও
সহানুভুতি।

বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রী মিলিত হয় নির্জনে একটি বিশেষ মুহুর্তে। তখন স্বাভাবিক ভাবেই  স্বামী-স্ত্রীর  মনে বয়ে যায় কামোত্বজনার ঝড়ো হাওয়া, অস্থির করে তুলে সহবাসের তীব্র অনুভুতি। কিছু পুরুষ এই সময় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। বন্য প্রাণীর মত ঝাঁপিয়ে পড়ে স্ত্রীর উপর। একটু ভেবেও দেখেনা যে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী ঋতুবতী কিনা বা এতে স্ত্রীর সম্মতি আছে কিনাইসলামের হুকুম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে স্ত্রীর বারণও কোন কাজে আসে না। সে সহবাস করেই ফেলে। স্বামী-র এই বন্য আচরণে স্ত্রী তখন ভীষণ কষ্ট পায়। অস্বস্তিতে ভোগে। অথচ আল্-কুরআন তা পরিস্কার ভাষায় নিষেধ করে দিয়েছে এই বলে যে-
তোমরা ঋতুবতীকালীন সময় স্ত্রীর সাথে সহবাস করো না।

আল-কুরআনের এই হুকুমের রহস্য ও তাৎপর্য উদঘাটন করতে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান যে বিষয়টি আবিস্কার করেছে, তা এই যে, হায়েযের রক্তে এক প্রকার বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রিত থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তা ছাড়া ঋতুস্রাবের সময় রক্ত জমা হওয়ার কারণে স্ত্রীর বিশেষ অংগ সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং তার শিরা-উপশিরাগুলো উঠানামা করতে থাকে। তাই ঋতুকালীন সময়ে স্ত্রী সহবাস শারীরিকভাবে যেমন ক্ষতিকর তেমনি কখনো কখনো তা রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আর পরবর্তীতে দেখা দেয় যোনী পথে ব্যাথা ও জ্বালা-পোড়াসহ আরো অনেক মারাত্মক উপসর্গ। বর্তমানের মরণব্যাধি এইডস এই ধরনের অপরিণামদশির্তা থেকেই জন্ম নিয়েছে।

ইসলাম এই জঘন্য ও ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকার হুকুম দিয়েছে। এর পরিণাম হিসেবেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দেখা দেয় কঠিন কঠিন ব্যাধি যেমনঃ মারাত্বক সব যৌন রোগের পাশাপাশি, ঋতু সংক্রান্ত রোগ, মুত্রনালীর জ্বালা-পোড়া, তা থেকে পুঁজ নির্গত হওয়া ইত্যাদি। এর অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় সারা জীবন ধরে। এমনকি পরবর্তী প্রজন্মও তা থেকে মুক্তি পায়না। কোন কোন ফকীহঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হলে স্বামী-র উপর কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার কথা বলেছেন যার পরিমাণ এক দীনার অথবা অর্ধ দীনার।

ইমাম আবু হানীফা (রহঃ), ইমাম মালেক (রহঃ) ও ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মতে কাফফারা ওয়াজিব হয় না। তবে এস্তেগফার ওয়াজিব। আর ইমাম আহমদ (রহঃ) বলেন, কাফফারা হিসেবে এক দীনার সদকা করতে হবে। তা সম্ভব না হলে কমপক্ষে অর্ধেক দীনার সদকা করতে হবে। 

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন...

আরও




ঋতুস্রাবকালীন সহবাস সম্পর্কিত: #হায়েজ-#নেফাছ #সহবাস, ঋতুস্রাব, যৌন রোগ, ঋতুস্রাবের সময় রক্ত, স্ত্রী সহবাস, শারীরিক সম্পর্ক, রক্তস্রাব বন্ধ, নারী-পুরুষের মিলন, অবাধ যৌনাচার, বিবাহ, যৌন মিলন

No comments:

Post a Comment